স্টাফ রিপোর্টার : শিশুখাদ্য ফলের জুস তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। তবে সেই ফলের জুসে কোনো ধরনের ফলের উপস্থিতি নেই। শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল এবং রং ব্যবহার করেই তৈরি করা হচ্ছিল সেসব জুস। ফরিদপুরে এমনই একটি কারখানায় অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। তবে অভিযানের ঘটনা টের পেয়ে পালিয়ে গেছেন ওই কারখানার মালিক। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমান ভেজাল জুস। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কারখানাটি। ফরিদপুর পৌরসভার মাহমুদপুর এলাকার ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের পাশে মো. নাছিরুজ্জামানের বাড়িতে এ কারখানাটি চলছিল।
বাইরে থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই। দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভেতরে কয়েকটি রুমের ভিতরে বসানো হয়েছে মেশিন। সেখানেই চলছে বিষাক্ত ক্যামিকেল ও বিভিন্ন রং ব্যবহার করে জুস তৈরি করা হচ্ছিল। এসময় একই বাড়িতে অন্য ঘরে অবৈধভাবে আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করায় একটি কারখানও পাওয়া যায়। সেখানে তাদের ল্যাব সহ রয়েছে বোতলাজাত ও প্যাকেজিংয়ের ব্যাবস্থা। শনিবার (০৪ মে) দুপুর ২টার দিকে মাহমুদপুরের ওই বাড়িতে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত।
এ আদালতের নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসকের অফিসের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুজিবুল ইসলাম। আদালত সুত্রে জানা গেছে, নোংরা পরিবেশে বিষাক্ত ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুস। জুসের বোতলে বিভিন্ন নামী দামী কোম্পানীর লেভেল লাগানো হচ্ছে। লিচু, ম্যাংগো জুস ছাড়াও চকলেট প্যাকেট করা হচ্ছে। পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক এ্যালকুলি সহ বিভিন্ন ঔষধও বোতলজাত করা হচ্ছে। কর্মরত নারী শ্রমিকরা জানান, তারা সকালে আসেন রাতে চলে যান। তারা চলে যাওয়ার পর রাতে তৈরি করা হয় জুস, সকালে এসে তারা বোতলজাত করেন। তবে অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যান কারখানার মালিক মো. লিটন মিয়া। সেখান থেকে বিপুল পরিমান ভেজাল জুস ও বিভিন্ন মালামাল জব্দ করে আদালত।
তবে কর্মরত ছয় নারীর মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযানের নেতৃত্বদানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুজিবুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিপুল পরিমান নকল জুস জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও আয়ুর্বেদিক অ্যালকুলি সহ বিভিন্ন ধরনের চকলেট জব্দ করা হয়। তিনি আরো জানান, পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে জব্দকৃত মালামাল। এছাড়া কিছু মেশিনারিজ রয়েছে সেগুলোও জব্দ করা হয়েছে। কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানার মালিক লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া একই বাড়িতে অবৈধভাবে আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করায় নুরুজ্জামান নামে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযানে অংশ নেওয়া জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বজলুর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মো. লিটন মিয়াকে আসামি করে একটি মামলাদায়ের করা হয়েছে। আদালত পরিচালনায় সহায়তা করেন ফরিদপুর জেলা এনএসআই উপ-পরিচালক তৈয়েবুল মাওলা, এনএসআই ফিল্ড কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুজ্জামান।
Leave a Reply