স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সক্রিয় সদস্য মো. সালাউদ্দীন ওরফে ক্ষণিকের মুসাফির (৩০) কে ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের দুটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সাড়ে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে তাকে আরও চার মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রæয়ারি) দুপুর সোয়া দুইটার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক অশোক কুমার দত্ত এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামী আদালতে হাজির ছিলেন। মো. সালউদ্দীন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের শাকপালদিয়া গ্রামের আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার সাথে যুক্ত ছিলেন।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট জানতে পারে নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের শাকপালদিয়া গ্রামের আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার আশেপাশের এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্যরা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, হত্যা, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি, অন লাইন ও সাইবার স্পেসের মাধ্যমে জঙ্গী প্রচারণ প্রচারণা, জননিরাপত্তা বিপন্ন করা, জনমনে ত্রাস ও আতংক সৃষ্টির লক্ষে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নিয়মিত ভাবে গোপনে একত্রিত হয় মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ১৮ আগষ্ট বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের ইনভেস্টিগেশন এন্ড প্রসিকিউশন উইং এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জিসান আহম্মেদ নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের মাঝিকান্দা গ্রামে অভিযান চালায়।
সেখানে সালাউদ্দিনসহ চারজন সভা করার জন্য সমবেত হয়। পুলিশ সালাউদ্দীনকে গ্রেপ্তার করে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকি তিনজন পালিয়ে যান। এসময় তার কাছ থেকে একটি অ্যড্রয়েড মুঠোফোন, এনায়েতুল্লাহ আলতামাশের লেখা নাঙ্গা তরোয়াল নামে একটি বই, মুফতী মোহাম্মদ আবু আব্দুল্লার কিতাবুত তাওহিদ নামের একটি বই, মুফতী মো. জসীমউদ্দীন রাহমানী উন্মুক্ত তরবারি নামে একটি বই, রিবাতী মোহাম্মদ কেমন হতে পারে গাজওয়াতুল হিন্দ ? কি করবো আমি নামে একটি গ্রন্থ জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জ্ঞিাসাবাদে সালাউদ্দিন জানায়, ক্ষণিকের মুসাফির নামে ফেসবুক আইডি টি তাঁর। তিনি পুলিশকে জানায় দেশ হতে ইসলাম বিরোধী কাজ দূর করে যে কোন মূল্যে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করাই তাদের দলের মূল উদ্দেশ্য।
২০২০ সালের ১৯ আগষ্ট সালাউদ্দিনকে আসামি করে মামলা করেন পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের ইনভেস্টিগেশন এন্ড প্রসিকিউশন উইং এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো জিসান আহমেদ। সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১৩ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিনের ইনভেস্টিগেশন উইং এর পরিদর্শক মো. আজগর আলী ও একই ইউনিটের পরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ জুবায়ের মক্কী গত ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট সালাউদ্দিনকে ওই পাঁচটি ধারায় অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আদালত সুত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৯ ধারায় সালউদ্দীনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা, জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারদন্ড দেওয়া হয়।
এছাড়া একই আইনের ৮ ধারায় ছয় মাসের বিনাশ্রম করাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারদন্ড দেওয়া হয়। তবে তার বিরুদ্ধে একই আইনের ১০, ১১ ও ১৩ ধারার অভিযোগগুলি প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আদালত জানায় আসামিকে দুই আইনে দেওয়া এ সাজা একটি শেষ হওয়ার পর অপরটি শুরু হবে। রায়ের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করে ঘটনার সত্যতা নির্শ্চিত করে ওই আদালতের সরকারি কৌশলী (পিপি) নওয়াব আলী মৃধা বলেন, এ রায় দেশে সন্ত্রাসী জঙ্গী তৎপরতা নির্মূলে সহায়তা করবে। পাশাপাশি দেলের তরুণ সমাজের বিপথগামী হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে।
Leave a Reply