মোঃ সরোয়ার হোসেন, ভাঙ্গা : ফরিদপুরের ভাঙ্গা-মাওয়া-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের এক্রপ্রেসওয়ের প্রবেশ মুখ ভাঙ্গা বিশ^রোড গোলচত্বর এলাকায় পরিবহনগুলোর নৈরাজ্য চরমভাবে দেখা দিয়েছে। রাজধানীমুখি বিভিন্ন পরিবহন বিশেষ করে প্রচেষ্টা,ইলিশ,গুনগুনসহ প্রায় সব পরিবহন যাত্রীদের জিম্মি করে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া।
ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত সরকারী নির্দেশনায় ১৮০ টাকা ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও আদায় করছে যাত্রী প্রতি ৫,শ থেকে ৬,শ টাকা। বিশেষ করে ভাঙ্গা বিশ^রোড সংলগ্ন একটি চক্রের মাধ্যমে সিন্ডিকেট তৈরী করে আদায় করছে এ অতিরিক্ত ভাড়া। শুক্রবার বিকেল থেকে পরিবহনগুলোতে যাত্রীচাপ বৃদ্বি পেলে যাত্রীদের গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। রাত যত বৃদ্বি পায় যাত্রীদের অসহায়ত্বের সুযোগে যে যার মত ই”্ছে মত এ গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হয়।
কোন যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া দিতে অস্বীকার করলে স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় তাদের রীতিমত হুমকি দিয়ে জিম্মি করা হয়। বিশেষ করে মহিলা যাত্রীরা ছিল আরও অসহায়। বরিশাল-ঢাকা গামী ও খুলনা-ঢাকাগামী পরিবহনগুলো বিশেষ করে ভাঙ্গা বিশ^রোড দক্ষিন পাড় এবং উত্তরের পৌরসভার নিকট পৃথক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আগত যাত্রীদের নিকট থেকে আদায় করা হয় এ অতিরিক্ত ভাড়া।
ভাঙ্গা বিশ^রোড গোলচত্বর এলাকায় রাজধানীমুখি বেশীরভাগ পরিবহনগুলো যাত্রীবহন করায় এখানে দুরদূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের চাপ ছিল অসহনীয়। অধিকাংশ দুরের যাত্রীরা স্থানীয় দালালদের দৌরাত্মে ছিল চরম অসহায়। বিশেষ করে স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ভাঙ্গায় যাত্রী কাউন্টার নেওয়ায় পুলিশও ছিল অসহায়। তাদের রুখতে কেউ সাহস করেনি।
এদিকে শনিবার দুপুরে ভাঙ্গা বিশ^রোড গোলচত্বরে এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশমুখে গিয়ে দেখা যায় শত শত যাত্রী রাজধানীতে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এ সুযোগে পরিবহনগুলো এক প্রকার জিম্মি করে যাত্রীদের নিকট থেকে আদায় করছে ৫,শ টাকা। বরগুনা থেকে আসা বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া এক শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান জানান,তাকে জিম্মি করে ভাঙ্গা থেকে ঢাকাগামী প্রচেস্টা পরিবহন ৫,শ টাকা আদায় করেছে। তিনি প্রশাসনের কাছে এর প্রতিবাদ জানান।
স্থানীয় জনৈক ঢাকাগামী যাত্রী কহিনুর বেগম বলেন, তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি বাধ্য ৫,শ টাকা দিয়ে ইলিশ পরিবহনের যাত্রী হয়েছেন। পরিবহনগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের খবরে প্রশাসনের একটি টীম মাঠে নামে। দুপুরের দিকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্র্রেট ভাঙ্গা সহকারী কমিশনার(ভুমি) এস.এম মুস্তাফিজুর রহমান বেশ কয়েকটি এলাকায় ঝটিকা অভিযান চালান।
এ সময় যাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কয়েকটি পরিবহনকে ৮ হাজার জরিমানা করেন। এ সময় তিনি কয়েকজন যাত্রীকে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তাকে অবহিত করার কথা বলেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রীভাড়া আদায় বন্ধে প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। তিনি পরিবহনগুলোর নৈরাজ্য বন্ধে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক সব ব্যবস্থা গ্রহনের আশ^াস দেন।
তবে স্থানীয় সিন্ডিকেটের সহায়তায় পরিবহনের শ্রমিকরা যেন ইদুর বেড়ালের খেলায় মেতে উঠে। ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট চলে যাওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয় তাতের ব্যাপক নৈরাজ্য। শুরু হয় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। অপরদিকে মহাসড়কগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত ছিল অসহনীয় যানযট। টেকেরহাট থেকে ভাঙ্গা বগাইল টোলপ্লাজা পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১০ কি.মি পর্যন্ত ছিল যানবাহনগুলোর লম্বা লাইন।
ঢাকাগামী জনৈক যাত্রী আবুল কালাম জানান। সড়কে তিনি প্রায় দেড় ঘন্টা আটকে আছেন। গভীর রাতে বগাইল টোলপ্লাজায় ছিল প্রচন্ড ভীড়। সড়কের শৃংখলা ফিরাতে ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ,ভাঙ্গা থানা পুলিশ রাত-দিন ব্যাপক তৎপরতা চালায়। প্রচন্ড কাজের চাপে পুলিশ সদস্যদের চোখেমুখে ছিল ক্লান্তির ছাপ।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি হামিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঈদফেরত রাজধানীমুখি যাত্রীদের চাপ সামলাতে পুলিশ হিমসীম খাচ্ছে। রাত-দিন নিরলসভাবে তারা কাজ করছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্র¯তত রয়েছে।
Leave a Reply