প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
মোসাঃ হাফিজা বগেম (৪৫), স্বামী মৃত- সেকেন্দার আলী মোল্লা, সাং-চরকান্দা, থানা-ভাংগা, জেলা-ফরিদপুর। তার স্বামীর মৃত্যু সংক্রান্তে গত ২৭/১০/২০২০খ্রীঃ বাদী হয়ে ভাংগা থানায় খোকন মোল্ল্যা ও খলিল মোল্ল্যার নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলার এজাহার দায়ের করেন। বাদী মোসাঃ হাফিজা বেগম উক্ত এজাহারে উল্লেখ করেন যে, গত ইং ২৪/১০/২০২০ তারিখ রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় বাদীর স্বামী তার আপন বড় ভাই খোকন মোল্লার নিকট পাওনা টাকা আনার কথা বলে বাড়ি হতে বাহির হয়ে যায়। ২৬/১০/২০২০খ্রিঃ দুপুর অনুমান ০২.৩০ ঘটিকার সময় ভাঙ্গা থানাধীন চরকান্দা সাকিনস্থ নির্মাণাধীন রেল লাইনের দক্ষিণ র্পাশ্বে রাঘদার বিলে জাল পাততে গিয়ে স্থানীয় দেলোয়ার মোল্লা, বাদীর স্বামীর লাশ দেখে এলাকায় সংবাদ দিলে বাদী হাফিজা বেগম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশটিকে তার স্বামী বলে শনাক্ত করে। পরর্বতীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া বিধি মোতাবেক লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত ও ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালে প্রেরণ করেন । আসামী কবির উদ্দিন খোকন মোল্যা ও খলিল মোল্লার সহিত র্দীঘদিন যাবৎ জমি ও রেল লাইনের অধিগ্রহণকৃত এজমালি সম্পত্তির টাকা পয়সা নিয়ে বাদীর স্বামীর সহিত বিরোধ ছিল । উক্ত বিরোধ ও র্পূব আক্রোশের জের ধরে উক্ত আসামীগণ অজ্ঞাতনামা আরো আসামীদের সহযোগিতায় ২৪/১০/২০২০খ্রিঃ রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকা হতে ২৬/১০/২০২০খ্রিঃ দুপুর অনুমান ০২.৩০ ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় বাদীর স্বামী সেকেন্দার আলী মোল্ল্যাকে হত্যা করে লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে বিলের পানিতে ফেলে রাখে।
বাদীর উক্ত এজাহারের ভিত্তিতে ভাঙ্গা থানার মামলা নং- ২০, তাং- ২৭/১০/২০২০খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয় এবং মামলার তদন্তভার এসআই(নিঃ)/মোঃ আবুল কালাম আজাদের উপর র্অপণ করা হয়। পুলিশ সুপার ফরিদপুর মহোদয়ের প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী র্কমর্কতা হত্যা মামলাটি প্রকাশ্যে ও গোপনে গভীরভাবে তদন্ত করেন । তদন্তকালে মামলার তদন্তকারী র্কমর্কতা এসআই(নিং)/মোঃ আবুল কালাম আজাদ মামলাটি মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হন।
মামলাটি তদন্তকালে দেখা যায় যে, মামলার বাদী হাফিজা বেগম ও তাহার স্বামীর সহিত আতিয়ার রহমান ভুলু(৬৫), পিতা- মৃত সিরাজ উদ্দিন মোল্ল্যা, সাং- আরামবাগ চরকান্দা, থানা- ভাঙ্গা, জেলা- ফরিদপুর এর সু-সর্ম্পক ছিল এবং মামলার ভিকটিম সেকেন্দার তার আপন বড় ভাই খোকন মোল্লা ও চাচাতো ভাই জমির মোল্লার সহিত রেলওয়ের অধিগ্রহনের আওতায় পড়া ২৭ শতাংশ জমির প্রাপ্ত টাকা ভাগ বন্টন নিয়ে বিরোধ ছিল । অপরদিকে গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আতিয়ার রহমান ভুলু(৬৫) এর সহিত ভিকটিমের আপন বড় ভাই খোকন মোল্ল্যার সাথে বিরোধ ছিল।
মামলার বাদী হাফিজা বেগমের স্বামীর সহিত খোকন মোল্ল্যার বিরোধের সুযোগ নিয়ে ভুলু মোল্লা বাদীনির সাথে তার পরকীয়ার সর্ম্পককে পুঁজি করে খোকন মোল্লা ও জমির মোল্লাকে ফাসিয়ে দিয়ে এলাকায় তার আধিপত্যকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে গত ২৪/১০/২০২০ইং তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৬.০০ টার সময় গ্রেফতারকৃত আসামী আতিয়ার রহমান ভুলু হাফেজা বেগমকে তার বাড়ীর পাশে কলা বাগানের ভিতরে নিয়ে পরার্মশ দেয় যে, তোর স্বামী তো অনেক লোকের কাছ থেকে সুদের উপরে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে। ঐ সুদের টাকার জন্য তোর স্বামীও বাড়ী থাকতে পারে না, তোকেও লোকজনের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা শুনতে হয় । তোর ভাসুর খোকন মোল্ল্যাও রেলের টাকা পাইলো সেটাও তোর স্বামীকে ভাগ দেয় নাই । ঐ খোকন মোল্ল্যাকে সায়েস্তা করা দরকার । তুই আর কতদিন মানুষের জ্বালা যন্ত্রণা স্হ্য করবি? তার থেকে ভালো তোর অসুস্থ্য স্বামীরে মেরে লাশ ওদের বাড়ীর কাছাকাছি বিলের মধ্যে ফালাই দিয়ে ওগোরে ফাসাইয়া দেই । তাহলে তুই খোকনের কাছ খেকে রেলের টাকাও আদায় করতে পারবি, খোকন মোল্লাকেও সায়েস্তা করতে পারবি। আমি সব সময় তোর পাশেই থাকবো এবং তোর সব কিছুর দেখাশুনার দায়িত্বও আমিই নিবো । তখন তুই শান্তিতে থাকতে পারবি। হাফেজা তখন ভুলুর কথায় রাজি হয়ে যায়। সেই সুযোগেই পরকীয়া প্রেমিক ভুলু মোল্লা হাফেজার হাতে সাদা রংয়ের ছোট ০৪(চার) টা ঘুমের ট্যাবলেট দেয় । হাফেজার হাতে ঘুমের ট্যাবলেট গুলো দিয়ে বলে আমি আগামীকাল ইং ২৫/১০/২০২০ তারিখ রাতে এশার নামাজের পর আমি তোর বাবার বাড়ীর পুকুর পাড়ে থাকবো। তুই এই ঘুমের ট্যাবলেট গুলো রাতে সেকেন্দারকে খাওয়াইয়া পুকুর পাড়ে নিয়ে আসবি তারপর যা করার তা আমিই করবো । পরকীয়া প্রেমিক ভুলু মোল্ল্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫/১০/২০২০ইং তারিখ এশার নামাজের আগেই হাফেজা তাহার স্বামী সেকেন্দার মোল্ল্যাকে রাতে খাবার খাওয়ানোর পরে ০৪টি ঘুমের ঔষধ একত্রে খাইয়া পুকুর পাড়ের দিকে নিয়ে যায়। পরকীয়া প্রেমিক ভুলু মোল্ল্যাও র্পূব পরিকল্পনা অনুযায়ী এশার নামাজের আগেই তার দোকান থেকে ছেলে সম্রাটকে নিয়ে সোহরাব মোল্লার মসজিদ সংলগ্ন পুকুর পাড়ে অবস্থান করে এবং তার ছেলে সম্রাটকে বলে খোকন মোল্ল্যা আর জমির কে শায়েস্তা করার জন্য ফাঁদ পাতা হয়েছে । কিছুক্ষণ পরে হাফিজা সেকেন্দারকে নিয়ে র্অধচেতন অবস্থায় পুকুর পাড়ে আসে এবং ঘুমের ওষুধের প্রভাবে সেকেন্দার আস্তে আস্তে অচেতন হয়ে হাফিজার কাঁধে ভর দিয়ে থাকে । মামলার বাদী হাফিজার সামনেই পরকীয়া প্রেমিক ভুলু সেকেন্দারের পিঠে দুইটা লাথি মারে । ভুলুর ছেলে সম্রাটও সেকেন্দারের বুকে কয়কেটা ঘুষি মারে । সেকেন্দার অচেতন অবস্থায় বলে ভাই তোরা আমারে মারিস না । তখন ভুলু মোল্ল্যা সেকেন্দারের মুখ চেপে ধরে রাখলে সেকেন্দার একটা গোঙানি দিয়ে নিস্তেজ হয়ে যায়। তখন আসামী ভুলু ও তার ছেলে সম্রাট ভিকটিম সেকেন্দার মোল্লাকে ধরাধরি করে নৌকায় তুলতে গেলে ঐ সময় সেকেন্দারের ছেলে হোসাইন একটি র্টচ ও কোচ হাতে করে লাইট মারতে মারতে উক্ত ঘটনাস্থলে আসে এবং তার মা, ভুলু ও তার ছেলে সম্রাটকে তার বাবা সেকেন্দারের লাশ নৌকায় তুলতে দেখে । আসামী ভুলু ও তার ছেলে সম্রাট ভিকটিমের ছেলে হোসাইনকে ভয় দেখায় যে তোর বাবাকে মেরেছি,তুই যদি কোন টু শব্দ করিস তবে তোকেও এখানেই শেষ করে ফেলব । পরে উক্ত ভুলু ও তার ছেলে সম্রাট ভিকটিম সেকেন্দারের ছেলেকে সহ নৌকায় লাশ তুলে ভাঙ্গা থানাধীন চরকান্দা রেল লাইনের একটু দুরে নিয়ে সেকেন্দারের হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে সেকেন্দারের লাশ নৌকা থেকে বিলের মধ্যে হাটু পানিতে ফেলে দেয় এবং তারা বাড়ী চলে যায়।
পরের দিন ইং ২৬/১০/২০২০ তারিখ দুপুর ০২.৩০ ঘটিকার সময় চরকান্দা রাগার বিলে হাটু পানির কচুরিপানার ভিতর সেকেন্দার আলী মোল্ল্যার লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে সংবাদ দেয় । পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ বিলের পানি হতে উপরে উঠালে সেখানে ভিকটিম সেকেন্দার আলীর হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ভুলু মোল্লা, সম্রাট মোল্লা, হোসাইন মোল্ল্যা, হাফিজা বেগম কান্নাকাটি করে উপস্থিত লোকজনের সামনে পুলিশের কাছে সেকেন্দার আলী মোল্লার হত্যার বিচারের দাবী জানায়। পরর্বতীতে হাফিজা বেগম তার প্রেমিক ভুলু মোল্ল্যাসহ তার ছেলে সম্রাট মোল্ল্যা, হোসাইন মোল্ল্যা সহ আরো লোকজন নিয়ে র্পূব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে । মামলা রুজু করার পর থেকেই বাদীর প্রেমিক ভুলু মোল্ল্যা মামলার তদন্তকারী র্কমকতাকে দিয়ে তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিভিন্ন পন্থায় প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তদন্তকারী র্কমর্কতা ভুলু মোল্ল্যার প্ররোচনায় প্রভাবিত না হয়ে তার প্ররোচনাকে মামলার মূল সূত্র ধরেই তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একর্পযায়ে গত ইং ০৮/০৬/২০২১ তারিখ অভিযান চালিয়ে ভুলু মোল্ল্যা ও তার ছেলে সম্রাটকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার বিষয় স্বেচ্ছায় স্বীকার করে।পরর্বতীতে ইং ০৯/০৬/২০২১ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে জনাব আসিফ আকরাম, বিজ্ঞ সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ৩নং আমলী আদালত, ফরিদপুর আদালতে সেকেন্দার আলীকে হত্যার ঘটনার সহিত সরাসরি জড়িত থাকার বিষয় স্বেচ্ছায় স্বীকার করে এবং সেকেন্দার আলীর স্ত্রী ও ছেলে হোসাইন জড়িত বলে জানায়। আসামীদের স্বীকারোক্তি মতে ইং ০৯/০৬/২০২১ইং তারিখ রাতে শাহমুল্লুকদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাদীনি হাফিজা বগেম ও তার ছেলে হোসাইন কে আটক করা হয় । মামলার বাদীনি হাফিজা ও তার ছেলে হোসাইনকে জিজ্ঞাসাবাদে সেকেন্দার হ্ত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করলে অদ্য ইং ১০/০৬/২০২১ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে জনাব আসিফ আকরাম, বিজ্ঞ সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ৩নং আমলী আদালত, ফরিদপুর আদালতে সেকেন্দার আলীকে হত্যার ঘটনায় তারা সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
Leave a Reply