মোঃ সরোয়ার হোসেন, ভাঙ্গা : ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসন্ন কোরবানীকে সামনে রেখে খামারীরা পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিনরাত ভাল লাভের আশায় পশুগুলোকে হাটগুলেঅর জন্য প্রস্তুত করছেন। প্রতি বছরের মতো এবারো খামারীরা স¤পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু, ছাগল মোটাতাজা করেছেন। কোন প্রকার ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করছেন। এসব পশু বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা। শেষ মুহুর্তে বিক্রয়ের জন্য খামারীরা পশুগুলোকে পরিচর্যার মাধ্যমে প্রস্তত করছেন।
উপজেলা প্রানী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এলাকার প্রায় ৫ হাজার খামারী ২৮ হাজার গরু এবং ৫ হাজারেরও বেশী ছাগল বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করেছেন। নবীন খামারী থেকে শুরু সৌখিন খামারী রয়েছেন। খামারগুলোতে শোভা পাচ্ছে ছোট,মাঝারী এবং বড় ওজনের বিদেশী উন্নত জাতের গরু। এলাকার কয়েক জন প্রবাসী তরুন সহ এলাকার অনেক বেকার যুবক পশুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। অনেকে শখের বশে খামার করে লাভবান হয়ে আরও বড় পরিসরে খামার গড়ে তুলছেন। তেমনি একজন জনপ্রতিনিধি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানমাওলানা ইসাহাক মোল্লার খামারে রয়েছে বিশাল আকারের ৩টি গরু সহ ১৫ টি গরু।
প্রায় ৮ লক্ষ টাকা মূল্যের খামারে থাকা গরুটি দেখতে ক্রেতারা যাচ্ছেন। সম্পূর্ন দেশীয় পদ্বতিতে ঘাস,খইল,ভুষি প্রভৃতি খাবারের মাধ্যমে পশুগুলোকে মোটাতাজা করছেন। মাওলানা ইসাহাক মোল্লা জানান,শখের বশে একটি বাছুর লালন-পালন করে বিশাল আকারের ষাড় হওয়ায় লাভবান হব বলে আশা করছি। এছাড়া তার খামারে রয়েছে আরও ৩ টি বড় আকারের ষাড়। অতি শিগ্রই ১,শ টি গরু নিয়ে একটি গড়ে তুলবেন বলে তার পরিকল্পনার কথা জানান। এলাকার খামারীরা জানান,গো-খাদ্যের দাম বেশী হলেও পশুর দাম ভাল থাকায় তারা লাভের আশা করছেন। তবে ভারতীয় গরু আমদানী হলে তারা লোকসানে পড়বেন ।
এদিকে উপজেলা প্রাণি স¤পদ বিভাগের তথ্য মতে, ঈদকে সামনে রেখে পশুর হাটগুলোতে সেবা প্রদানের জন্য ২টি ভেটেরিনারী টীম গঠন করা হয়েছে। তারা পশুর হাটগুলোতে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পরামর্শ এবং স¦াস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য চিহ্নিত করবে। জেলার ছয়টি উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার খামারী দেশীয় পদ্ধতিতে ২৮ হাজারের বেশি পশু মোটাতাজা করেছেন। দেশের বিভিন্ন হাট থেকে পশু কিনে ৬ মাস ও ১ বছর আগে থেকে গবাদি পশু লালন পালন শুরু করেন খামারীরা। তারা জানান, প্রতি বছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা।
ছোট বড় খামারের পাশাপাশি কৃষকরাও ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট পরিহার করে ঘাস খড়ের পাশাপাশি খৈল, কুড়া, ভ‚ষি খাদ্য হিসেবে খাওয়ানোর মাধ্যমে মোটাতাজা করা হয়েছে এসব গরু। বাজারে দেশিয় গরুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় বেশ লাভজনক হবেন বলে আশাবাদী তারা। উপজেলার সাউতিকান্দা গ্রামের জোবায়ের হোসেন বলেন, এবার আমাদের খামারে দেশিয় জাতের ১৫টি গরু পালন করা হয়েছে। স¤পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। দেশীয় গরুর চাহিদা থাকায় এরমধ্যে ক্রয়ের জন্য খামার পরিদর্শনে আসছেন ক্রেতারা।
অনেকে খামার থেকেই পছন্দের গরু কিনে নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। উপজেলার বালিয়াচরা এলাকার খামারী মামুন বলেন, দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণ করায় এই অঞ্চলের গরুর চাহিদা অনেক বেশি। ঈদের আর বেশি দিন বাকি না থাকায় পশুর যতেœ এখন ব্যস্ত সময় পার করছি। আমার খামারে প্রায় ২৫টি গরু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি গরুকে কাঁচা ঘাস,খড়,তিলের খৈল,ছোলার খৈল, মসুুরী ডালের খৈল, মটরসহ বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়েছে। এবার ঈদে বিদেশী গাং পুরোপুরি আমদানী বন্ধ করা গেলে লাভবান হবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণি স¤পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ঈদকে সামনে রেখে উপজেলায় ২টি ভেটেরিনারী টিম সার্বক্ষনিক পশুর হাটগুলোতে কাজ করছে। পশু মোটাতাজাকরণে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ঔষধ ব্যবহার বন্ধে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে । এছাড়া ভ্রাম্যমান হাটগুলোতে অসুস্থ্য পশুর চিকিৎসাসেবা,স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে। হাটগুলোতে টীমগুলো সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করছে এবং আসন্ন ঈদ পর্যন্ত ভ্রাম্যমান টীম কাজ করবে।
Leave a Reply