মামুনুর রশিদ, ভাঙ্গা :
ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের বড় হামিরদী গ্রামে দুই কিশোরের সাইকেল চালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমুলক মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার, অতঃপর হাজত বাস করার ফলে এসএসসি পাশকরা একটি ছেলের লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হয়রানীর শিকার হওয়া ওই বালকের দাবী গ্রাম্য কোন্দলে আমার পিতা ও পরিবারের সদস্যরা মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছি। যারফলে চলমান শিক্ষা জীবনের থেকে আমার একটি বছর পিছিয়ে পড়েছি এবং লেখাপড়া করে বড় হওয়ার যে স্বপ্ন’ ছিল তাও ভেঙ্গে গেছে ষড়যন্ত্রমুলক মামলায় আসামী হয়ে । আজ আমাকে কলেজে ভর্তির পরিবর্তে সংসারের দায় মাথায় নিয়ে মাঠে কাজ করতে হচ্ছে পিতার সাথে। আমার প্রশ্ন? পিতা মাতার কষ্টের টাকায় এসএসসি পাস করেও মিথ্যা মামলার কারনে অসহায় পরিবারের স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ায় তার দায়িত্ব নিবে কে?
সরেজমিনে ঘটনা তদন্তে গিয়ে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হামিরদী গ্রামের সাধারনের চলাচলের রাস্তায় বাইসাইকেল চালান কেন্দ্র করে ঐ গ্রামের সোহাগ, সজিবের সাথে প্রতিবেশী হাবিবুল্লার সাথে ঝগড়া হয়ে হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছালে স্থানীয় মুরুব্বিগন ঘটনাটি মিটিয়ে ফেলার উদ্দোগ নেয়। স্থানীয় সমাজপতিরা মীমাংসা করতে বিলম্বিত করে। এর কয়েকদিন পর সজিবের মা মেলো বেগম মুল ঘটনাকে আড়াল করে তার বাড়িতে আশ্রিত থাকা ভাগ্নী পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ুয়া সুমাইয়া নামের এক মেয়েকে জড়িয়ে প্রতিপক্ষ শাকিল, শাকিলের আপন ছোট ভাই হাবিবুল্লা ও তার চাচাত ভাই সম্রাট এবং সম্রাটের পিতা শওকত তালুকদারকে আসামী করে ভাঙ্গা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের (সংশোধন/ ৩) ধারায় ২০১৯ সালের ২৯জুন মামলা করেন। ভাঙ্গা থানা মামলা নং-৪৯। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সঠিকভাবে আসল রহস্য তদন্ত না করে মামলার বাদী পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উঠে। অতপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবদুল্লা আজিজ মামলাটির ২/১০/২০১৯ সালে আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে দোষীপত্র বা (চার্জশীট) নম্বর ৪৫৬(ক) আদালতে দাখিল করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
স্থানীয় সংবাদকর্মীরা এঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে মামলার আসামীগন ও হামিরদী ইউনিয়নের ওই গ্রামের প্রতিবেশীরা মামলাটি মিথ্যা মামলা ও অসহায় পরিবারকে হয়রানী করতে উক্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে দাবী করেন অসংখ্য গ্রামবাসী। বাদী পক্ষ ঘটনার সাথে লুটপাট করার যে অভিযোগ দায়ের করেছেন সে ঘটনাটি মূলত হয়রানী করার বিশেষ ষড়যন্ত্র বলেও দাবী করেন প্রতিবেশীরা।
ভুক্ত ভোগী সাকিল গং পরিবারের অভিযোগ, মামলার হওয়ার রাতেই ভাঙ্গা থানা পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করে পরের দিন আদালতে পাঠায়। আদালত আসামীদের জামিন না মুঞ্জুর করে তিনজনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আদালত আসামীদের মধ্যে হাবিবুল্লা নাবালক থাকায় তাকে জামিন দেন। প্রায় এক মাস পরে আদালত থেকে ফের জামিন পায় মামলার অপর তিন আসামী।
এদিকে এসএসসি পাশ করা আসামী সম্রাটের (২০১৯ সালের) কলেজের ভর্তির হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও মামলার আসামী হওয়ায় জেলে থাকার কারনে কলেজে ভর্তির সময় শেষ হয়ে যায় সম্রাটের । এরফলে একটি বছর সম্রাটের শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে যাওয়ায় সমাজের কাছে প্রশ্ন রাখেন ওই যুবক! একটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মামলায় আমাকে আসামি করায় আমার জীবনের থেকে যে একটি বছর ঝরে গেল এর দায় নিবে কে? অবশেষে তার লেখাপড়া স্থগিত হয়ে গেছে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অসহায় সম্রাট। তিনি আরও জানান, মিথ্যা ওই মামলায় আমার পিতা শওকত তালুকদার ও আমাকে আসামি করা হয়েছে। পিতা-পুত্র কি করে একত্রে নারী নির্যাতন করতে পারেন এই প্রশ্ন তুলে ধরেন যুবক সম্রাট তালুকদার।
সাকিল তালুকদার জানান, আমাকে ও আমার ছোট ভাই সাকিব তালুকদারকে হয়রানীমুলকভাবে মামলায় আসামী করা হয়েছে। আমার ছোট ভাই হামিরদী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। তার সাথে বাদী মেলো বেগমের ছেলে সোহাগ এর সাথে সাইকেল চালানো নিয়ে কথাকাটাকাটির জের থেকে পুলিশকে প্রভাবিত করে নারী শিশু নির্যাতন আইনের মামলা করে মেলো বেগম। নারী শিশু নির্যাতন আইনের মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবী করে এর সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবী করেন তিনি। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি দাবী করেন মিথ্যা ও হয়রানীমুলক এই মামলার পুনঃতদন্ত করার পাশাপাশি দুটি অসহায় পরিবার যেন হয়রানী শিকার না হয় এজন্য আইন বিচার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র ও অসহায় দুটি পরিবারের অভিযোগ, মেলো বেগম ইতিপুর্বেও অনেক গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে এইরুপ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তার একটি কৌশল মাত্র। মামলায় টাকা দিয়ে আপোষ করলে মেলো বেগম বিভিন্ন সময়ে মামলা তুলে নেয় বলে এঅভিযোগ গ্রামবাসীর। অতএব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও শংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বিজ্ঞ আদালতের কাছে গ্রামবাসীর দাবী যেন সুবিচার পায় অসহায় সাকিলগং পরিবার।
এই বিষয়ে মেলো বেগম বলেন, ভাঙ্গা থানা পুলিশ মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে পাঠিয়ে দেওয়ায় তা বিচারাধীন রয়েছে। আদালত এখন যেভাবে ফয়সালা করবে আমি সেই আশায় আছি। পিতা-পুত্র কিকরে শিশু ও নারী নির্যাতন মামলায় আসামী করেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী জানান, সম্রাট তালুকদারের (ছেলে) পিতা শওকত তালুকদারের নির্দেশেই এসব ঘটনা ঘটেছে বলেই পিতা-পুত্র মামলায় আসামী হয়েছে।
পিতা-পুত্র নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামী। এই বিষয়টি নিয়ে ভাঙ্গা থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, পুলিশ তদন্তপূর্বক প্রকৃত ঘটনা আদালতের কাছে বিচারপত্র (চার্জশীট) পেশ করেছে। আসামী পক্ষের কোন বক্তব্য আর পুলিশের কাছে তুলে ধরার সুযোগ নেই।
Leave a Reply