স্টাফ রিপোর্টার : ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ভাঙ্গার নূরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নে ঈদ উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া ৪ হাজার ৩৩০ কেজি চালের মধ্যে ৮০০ কেজি চাল পাওয়া গেল এক গ্রাম পুলিশের ভায়ের বাড়িতে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত সোমবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে ২৫ কেজি বস্তায় ভর্তি ৩২ বস্তা চাল জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবলা চক্রবর্তীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপার্শি নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন আলম এবং গ্রাম পুলিশ দুলাল সরদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ভাঙ্গা উপজেলার নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের বাকপুরা গ্রামের বাসিন্দা ও গ্রামপুলিশ দুলাল সরদারের বড় ভাই পাশের কাউলীবেড়া ইউনিয়নের মাইঝাইল গ্রামের বাসিন্দা হেলাল সরদারের বাড়ি থেকে নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের ভিজিএফ ওই ৩২ বস্তা চাল ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন সোমবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টার দিকে এ চাল জব্দ করে। যে বাড়িতে এ চাল পাওয়া যায় ঐ বাড়িতে কেউ থাকেন না। গ্রাম পুলিশ দুলাল সরদার নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩২ বস্তায় ৮০০ কেজি চাল সোমবার রাত ১০টার দিকে ভ্যানে করে নিয়ে তার ভাইয়ের বাড়িতে এনে রাখেন।
এ চাল গত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব ও অসহায়দের পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে দেওয়ার কথা ছিল। নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের দফাদারের দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রামপুলিশ সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার রাতে বাকপুরা গ্রামের গ্রাম পুলিশ দুলাল সরদার ৩২ বস্তা চাল (প্রতি বস্তায় ২৫ কেজি) ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এনে কাউলীবেড়া ইউনিয়নের মাইঝাইল গ্রামে তার বড় ভাইয়ের ফাঁকা বাড়ির একতলা ভবনে এনে রাখেন। এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পেরে বাড়িটি ঘিরে রেখে উপজেলা প্রশাসনকে জানায়। রাত ১টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে চাল জব্দ করে।
ভাঙ্গা উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকরাম হোসেন জানান, ঈদুল ফিতরের আগে নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ৪৩৩ জন অসহায় মানুষের জন্য ভিজিএফের ৪ হাজার ৩ শত ৩০ কেজি চাল তার কার্যালয় থেকে বরাদ্দ নিয়েছেন। এ চাল সম্পর্কে গ্রাম পুলিশ দুলাল সরদার বলেন, নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন আলম এ চাল আমাকে বাকপুরা মিশন এতিমখানায় দিতে বলেছেন। এ চাল গত ঈদের ভিজিএফ এর চাল। ঈদের আগে চাল বিতরণের পর ৫০ কেজির ১৬ বস্তা চাল বেশি হয়েছিল। চেয়ারম্যান আমাকে বেশ কয়েকদিন তাগিদ দিয়েছে চালগুলো এতিমখানায় দেওয়ার জন্য।
গত সোমবার আমি চাল নেওয়ার জন্য দুটি ভ্যান ভাড়া করি। ৩২টি বস্তায় (প্রতি বস্তায় ২৫ কেজি করে) দুটি ভ্যানে করে নিয়ে আসার পথে আমার এক ব্যবসায়িক কর্মচারীর অসুস্থতার খবর পেয়ে আমি সেখানে ছুটে যাই। ভ্যান চালকেরা আমি না থাকায় ঐ চাল আমার বড় ভাইয়ের তে নিয়ে যায়। ঐ বাড়িতে কেউ না থাকায় আমার ছোট ভাই চালগুলো বড় ভাইয়ের একটি দালান ঘরে আটকে রাখে। পরে প্রশাসন এসে জব্দ করে। নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন আলম সাহাবুর বলেন, আমি ঈদের আগে উপজেলা থেকে গরীবদের মাথাপিছু ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার জন্য ভিজিএফ বরাদ্দ পাই।
একই সময়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে আরও ২ টন বাড়তি বরাদ্দ পাই। চাল দেওয়ার পর ১৬ বস্তা চাল বেশি হয়। আমি গ্রাম পুলিশ দুলাল সরদারকে কয়েকদিন বলেছি চালগুলো নিয়ে বাকপুরা গ্রামের বাকপুরা ইসলামী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দেওয়ার জন্য। ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে ভাঙ্গা উপজেলা প্রকল্পনবাস্তবায়ন কর্মকর্তা মানস বসু বলেন, ভিজিএফ এর চাল অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে দেওয়ার সুযোগ নেই। গরীবদের তালিকা করেই এ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিতরণের সময় তালিকাভুক্ত কেউ অনুপস্থিত থাকলে তালিকার বাইরের দুস্থদের মাঝে তৎক্ষণাত ওই চাল বিতরণ করার কথা।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম কুদরত এ খুদা বলেন, গত সোমবার রাত ১টার দিকে ৩২ বস্তা সরকারি চাল নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের গ্রামপুলিশ দুলাল সরদারের ভাইয়ের বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন আলম সাহাবুর এবং গ্রাম পুলিশ দুলাল সরদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবলা চক্রবর্তীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply