স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শামা ওবায়েদকে ‘বেয়াদব’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে দক্ষিণবঙ্গে অবাঞ্ছিত করার হুমকি দিয়েছেন ভাঙ্গা-সদরদপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন। এ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শামা ওবায়েদ বলেছেন, ‘বেয়াদব কে, বাংলাদেশে কোন দল বেয়াদব সে কথা বাংলাদেশের মানুষ ভালো ভাবে জানে।
শামা ওবায়েদ প্রশ্ন রাখেন, ‘উনি (নিক্সন চৌধুরী) দক্ষিণ বঙ্গে আমাকে অবাঞ্ছিত করার কে?’ গত সোমবার (৩১ জুলাই) রাতে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ সম্পর্কে একথা বলেন নিক্সন চৌধুরী। সালথা উপজেলা সদরে অবস্থিত জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।মঙ্গলবার সকালে শামা ওবায়েদ মুঠোফোনে নিক্সন চৌধুরীর বক্তব্য সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। নিক্সন চৌধুরী শামা ওবায়েদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, বুকটা ফাইট্টা যায় দুই তিন দিন আগে দেখলাম পল্টনের সমাবেশে দাঁড়াইয়া আমাদেরই আপা নগরকান্দার আপা যেইভাবে চিৎকার দিচ্ছে, বাবারে বাবা।
উনার ঝাড়ি ধমক আর চিৎকার দেইখা আমার দুলাভাই জন্য দুঃখ হচ্ছে। এই খেচুনি খাইলে দুলাভাই থাকে কিভাবে। দুলাভাইয়েরর জন্য সবাই দোয়াা কইরেন যেন উনার সাথে ঘর করতে পারেন। নিক্সন চৌধুরী বলেন, উনার (শামা) উদ্দেশ্য বলবো যতটুক যোগ্যতা ততটুক নিয়া কথা বলেন। আপনার বক্তব্যে দেখলাম শামা ওবায়েদ আপা, আপনি আমার নেত্রীকে তুই-তামাক্কা করছেন। আপনার পিতারও কিন্তু এই সাহস ছিল না, উনি (ওবায়দুর রহমান) একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। শামাকে সতর্ক করে দিয়ে নিক্সন চৌধুরী বলেন, আপনি সাবধান হয়ে যান, ভবিষ্যতে যদি নেত্রীকে নিয়ে বেয়াদবি বক্তব্য দেন দক্ষিণবঙ্গে আপনাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে। বেয়াদব, এমন একটা বেয়াদব আবার ইলেকশন করবে।
আমরা লাবু মামাকে (শাহদাব আকবর চৌধুরী ওরফে লাবু। বর্তমানে ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য) বলবো আপনার আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভাঙ্গা সদরপুর, চরভদ্রাসনের জনগণ আপনার সাথে আছি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই বেয়াদবকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা আপনার সাথে থাকব। আগামীতে যদি আমার নেত্রীকে এই বেয়াদব যদি তুই-তামাক্কা কইরা কথা বলে তার জিহবা টাইনা আমরা ছিড়া ফেলব। এসময় নিক্সন চৌধুরী সমবেত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন. ‘আপনারা আছেন না আমার সাথে?’ নেতা-কর্মীরা ‘আছি আছি’ বলে সমর্থন জানায়।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ বলেন, আওয়ামী লীগ পরিবারের কাছ থেকে এক থেকে বেটার ভাষা জনগণ আশা করে না, বিএনপিও আশা করে না। ওনার নেত্রীতো খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে টুস করে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন। ‘যে হুকার ও যে সকল ভাষায় আওয়ামী লীগের নেতারা কথা বলেন তা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ এবং তার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বিএনপি নেতারা মনে করে না’-মন্তব্য করে শামা ওবায়েদ বলেন, আমার আব্বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, তিনি এ দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে, এ দেশের, স্বার্থে স্বাধীনতা রক্ষার স্বার্থে, এ দেশের মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার স্বার্থে, বহুবার হুংকার ছেড়েছেন।
ওনার সন্তান হিসেবে এদেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য শুধু একবার কেন যদি একশবার হুংকার ছাড়তে হয় শামা ওবায়েদ সেটা ছাড়বে। ‘দেশের নাগরিক হিসেবে এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব’-মন্তব্য করে শামা ওবায়েদ বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে এবং ভোটাধিকার স্বার্থে আমি কথা বলে যাবো এবং হুংকার ছেড়ে যাবো, নিক্সন চৌধুরীর ভাষায়। শামা ওবায়েদ বলেন, নিক্সন চৌধুরীরা কি ধরনের মানুষ, কি ধরনের লোকজন নিক্সন চৌধুরীর দল গত এক বছরে সালথায় যে অন্যায় অত্যাচার করেছে মামলা দিয়েছে তারা জনগণ ঘরে যেতে পারে না।
শামা ওবায়েদ বলেন, নিক্সন চৌধুরীর অকথ্য ভাষায় শামা ওবায়েদ ভয় পায় না। আমার গণতন্ত্রের স্বার্থে যতবার হুংকার ছাড়তে হয় ততবার হুংকার ছেড়ে যাবো। এ রকম কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা আমার পছন্দ না। শামা ওবায়েদ বলেন, সবচেয়ে বড় কথা ওনার প্রার্থী যখন জেলা পরিষদ নির্বাচনে দাঁড়ায় তার পক্ষে তদবির করতে উনি শামা ওবায়েদকে ফোন দেন। ওনার নির্বাচনের সময় উনি আমাকে ফোন করছেন। ‘এই ধরেনের কুরুচিপূর্ণ ভাষা শুধু দল ও নেত্রীকে খুশি করার জন্য দিয়েছেন’-মন্তব্য করে শামা ওবায়েদ বলেন, নিক্সন চৌধুরী যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করে শামা ওবায়েদ তা আশা করে না।
বেয়াদব কে বাংলাদেশে, কোন দল বেয়াদব সে কথা বাংলাদেশের মানুষ ভালো ভাবে জানে। শামা ওবায়েদ বলেন, দক্ষিণ বঙ্গে শামা ওবায়েদকে অবাঞ্ছিত করার উনি কে। দক্ষিনবঙ্গে ১৯৭১ সালে আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছিল। সালথা উপজেলায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে যে অন্যায় অত্যাচার করা হচ্ছে তা ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকবে তা সালথাসহ দেশের মানুষ ভালোভাবে জানে। সোমবার রাতে সালথার ত্রি-বার্র্ষিক এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহŸায়ক জিয়াউল হাসান।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. খায়রুজ্জামানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মুনির মো. শহীদুল হক । এ ত্রি-বার্ষিক সম্মেল শুরু হয় বিকাল ৪টায়। এ সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন ছয়জন এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন ১১জন। নতুন কমিটি ঘোষণা ছাড়াই রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ সম্মেলনের সমাপ্তি গোষণা করা হয়।
Leave a Reply