স্টাফ রিপোর্টার : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়ায় তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে অনেক গ্রামঞ্চলে। জেলা শহর বাদে বিভিন্ন উপজেলায় গত রবিবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি বলে জানা গেছে। এ কারণে জেনারেটর ভাড়া করেও মোবাইলে চার্জ দিচ্ছেন অনেকেই। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া রিমালের প্রভাব পড়ে ফরিদপুর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায়। সোমবার সারাদিন ভর বৃষ্টি থাকলেও রাতে বৃষ্টির সাথে বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকে।
ঘুর্ণিঝড়ে জেলার সদরপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নে ৫-৬ টি কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত ও চরভদ্রাসনের ঝাউকান্দা এলাকার দুটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ে গাছপালার ঢাল ভেঙে কিছু এলাকায় গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল কিছুটা প্রতি বন্ধকতা সৃষ্টি হলেও বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সদরপুর উপজেলার চর নাসিরপুরে ৪/৫ কি.মি. কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়। রিমালের কারণে তিনদিন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামঞ্চলে জেনারেটর ভাড়া করে লোকজনকে মোবাইল চার্জ দিতে দেখা গেছে। জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না বাজারে মামুন শেখের জেনারেটর ভাড়া করে কয়েক গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক লোকজন মোবাইলে চার্জ নিয়েছে।
এদিকে ফরিদপুর শহর বাদে ৯ উপজেলায় গত রবিবার রাতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিদুৎ বিহীন থাকে উপজেলা গুলোর অনেক এলাকা। এর মধ্যে কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়া, খুঁটি হেলে পড়া, ট্রান্সমিটার বিকলসহ বিভিন্ন স্থানে যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত ফরিদপুর পৌর এলাকা ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ চালু করতে পারেননি বিদ্যুৎ বিভাগ। বোয়ালমারী উপজেলার ময়না গ্রামের বাসিন্দা জেনারেটরে মোবাইলে চার্জ দেওয়া কসমেটিক্স ব্যবসায়ী শাহিদুল ইসলাম জানান, তিনদিন ধরে গ্রামে বিদ্যুৎ না আসায় আমরা কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক মানুষ জেনারেটরে মোবাইল প্রতি ২০টাকায় চার্জ নিয়েছি। বিদ্যুৎ না আসলে আবার হইতো রাতে অনেকেরই মোবাইলে চার্জ দিতে হবে জেনারেটরে।
জেনারেটরে অপর মোবাইলে চার্জ নেওয়া রং মিস্ত্রি সিরাজুল ইসলাম জানান, মোবাইল চার্জ ছাড়া সময়ই কাটে না। অবসর সময়ে ইউটিউব দেখে সময় কাটাই। পৌরশহরে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও গ্রামে এখনো সংযোগ চালু হয়নি আমাদের। জেনারেটর মালিক ময়না গ্রামের মতিয়ারের ছেলে মামুন শেখ এ ব্যবস্থা করেছেন। ভাঙ্গা উপজেলার কলেজ শিক্ষক দিলীপ দাস জানান, রবিবার রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো বাতাস বইতে থাকে। এই বাতাসে এ এলাকায় বেশ কিছু গাছপালা পড়ে গেছে। এছাড়া রবিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিহীন থাকে এ উপজেলার কয়েকটি গ্রামাঞ্চল। সেইসাথে ফোনের নেটওয়ার্কও কাজ করছিল না।
মধুখালী পৌর এলাকার মেছড়দিয়া গ্রামের সংবাদকর্মী মনিরুজ্জামান মুন্নু জানান, রিমালের কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও মধুখালীতে রবিবারের পর থেকে আজ মঙ্গলবার সকালে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়েছে। ১১টি ইউনিয়নের অনেক জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি। মঙ্গলবার বিকেলে আলফাডাঙ্গার সীমান্তবর্তী এলাকা সহস্রাইল গ্রামের ইউপি সদস্য আফরোজা বেগম জানান, ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে রবিবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্তও আমাদের সহ¯্রাইল বাজারসহ শেখর ইউনিয়ন ও রূপাপাত ইউনিয়নের ৩০-৪০টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করাও যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের নাম্বার গুলোয় ফোন দিলে শুধু ব্যস্ত দেখাচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহাম্মদ বাবর বলেন, রিমালের ব্যাপারে জেলাবাসী সতর্ক অবস্থানে ছিলো। ঘুর্ণিঝড়ে জেলার দুইটি উপজেলায় কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা পরিমানে সীমিত। মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জি.এম) এস এম নাসির উদ্দিন জানান, ঘুর্ণিঝড়ের সাথে বৃষ্টির কারণে রবিবার ও সোমবার মনিটরিং বাদে লাইনের কোন কাজই আমরা করতে পারিনি। আজ মঙ্গলবার মূলত সব এলাকায় কাজ চলছে। জেলা শহরে তেমন কোন ক্ষতি না হওয়ায় সেখানে সংযোগ চালু ছিল।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলার মেইন লাইনসহ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা বাদে সব লাইন চালু করা হয়েছে। তাছাড়া সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলায় ২৯ মে উপজেলা নির্বাচনের কারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেখানে লাইন চালু করার জন্য বেশি লোকজন পাঠানো হয়েছে। তবে যেখানে বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়া, খুঁটি হেলে পড়া, ট্রান্সমিটার বিকলসহ বিভিন্ন স্থানে যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে দ্রæত বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার কাজ চলছে। এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘ঝড়ে ফরিদপুরে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে চরভদ্রাসনে দুটি বাড়ি ও কিছু জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়া ও ডালপালা ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
Leave a Reply