স্টাফ রিপোর্টার :
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামীলীগের সদ্য দ্বায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের সভা আহ্বানকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. বেলায়েত হোসেন মিয়া সরকারী চাকুরীতে যোগ দেয়ায় এবং দলের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করায় এ পদটি শুন্য হয়। ০৬ মে ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে নগরকান্দা উপজেলার আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলা আওয়ামীলীগের ০১ নং যুগ্ম সাধারণ এ্যাড. জামাল হোসেন মিয়াকে। দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. জামাল হোসেন মিয়া স্বাক্ষরিত ০৯ মে তারিখের এক চিঠিতে বিশেষ সভা আহ্বান করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়। ১১ মে বেলা তিনটায় ওই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। এদিকে এই চিঠি প্রকাশ হওয়ার পর দিন গত ১০ মে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবী করে ০১নং সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুস সোবহান মিয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের আহ্বান করা বিশেষ সভা প্রসঙ্গে কিছুই জানেননা জানিয়ে এ সভা আহ্বান দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি দাবী করে সভা অনুষ্ঠিত হলে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে মর্মে জেলা নেতৃবৃন্দকে চিঠি দেন। যা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এদিকে ১১ মে সকাল থেকেই স্থাণীয় সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবুর সমর্থিত আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বাধীন পক্ষ সকাল থেকেন দুই থেকে তিনশ নেতাকর্মী নিয়ে আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। তারা জামাল হোসেনকে প্রতিহত করার ঘোষনা দিয়ে লাঠিসোটা নিয়ে মহড়াও দিতে থাকে। এদিকে বেলা চারটার দিকে সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে এ্যাড. জামাল হোসেন মিয়া উপজেলা সদরে প্রবেশ করেন। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
এ প্রসঙ্গে সাংসদ শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবুর পক্ষের নেতাকর্মীদের পক্ষে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি চৌধুরী মারুফ হোসেন বকুল জানান, নিয়মতান্ত্রিকভাবে এ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব দেয়া হলেও ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে পাশ কাটিয়ে অনিয়মতান্ত্রিভাবে সভা আহ্বান করা হয়েছে। যা গঠনতন্ত্র বিরোধী। তিনি জানান, কাউন্সিলের মাধ্যমে আয়মন আকবর চৌধুরীকে সভাপতি নির্বাচিত করা হলেও পরবর্তীতে আয়মন আকবর চৌধুরীর ক্রমাগত অনুপস্থিতির কারণে আব্দুস সোবহানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। এ অবস্থায় তাকে (আব্দুস সোবহান) না জানিয়ে সভা আহ্বান করা বৈধ নয় দাবী করে তিনি জামাল হোসেনকে প্রতিহত করার ঘোষনা দিয়েই নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন বলে জানান।
এদিকে নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামীলীগের সদ্য দ্বায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. জামাল হোসেন মিয়া বলেন, এখনো উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলু। তিনি থাকতে অন্য কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি দাবী করেন আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলুই উপজেলা আওয়ামীলীগের বৈধ সভাপতি। সভা আহ্বানের বিষয়টি তিনি অবগত জানিয়ে জামাল হোসেন মিয়া বলেন, ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আাকবর চৌধুরী লাবুর সন্ত্রাসীরাই শান্তিপুর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করতেই আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে অবস্থান নেয় এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাংচুর করে আমার সমর্থকদের উপর দোষ চাপাচ্ছেন।
যদিও এই অভিযোগ অস্বিকার করে সাংসদ শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু বলেন, ভিডিওতে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে কারা আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাংচুর করেছে। তিনি বলেন, যারা আওয়ামীলীগ করে তারা আওয়ামীলীগের অফিস ভাংচুর করতে পারেনা। তিনি আরো বলেন, জেলা আওয়ামীলীগ তাকে (জামাল হোসেন) দ্বায়িত্ব দিয়েছে সেটা আলাদা বিষয়, কিন্তু আওয়ামীলীগ কার্যালয় ভাংচুর করে জামাল হোসেন আবারো প্রমাণ করলেন তিনি আওয়ামীলীগকে ভালোবাসেন না। আওয়ামীলীগের কেউ আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাঙ্গতে পারেন না। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে নগরকান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিরাজ হোসেন জানান, রাত আটটা পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি, পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। তিনি বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। #
Leave a Reply