স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরের সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবি গ্রামে ভুবনেশ্বর নদীর পাড়ে স্থানীয় শৌলডুবি নূর এ মদিনা কবরাস্থানে দাফন দেওয়া হয় এক তরুণীকে। গত ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে অর্ধগলিত ওই তরুণীর মুতদেহ দাফন দেওয়া হয় সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবী গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে হাসি বেগম (২৪) হিসেবে। সদরপুরের বিষ্ণপুর ইউনিয়নের চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বড় বাড়ির মৃত শাহ আলম শেখের ছেলে মোতালেব শেখের স্ত্রী হাসি বেগম বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে এসে নিখোঁজ হন চলতি মাসের ৭ তারিখে।
এর ১৩ দিন পর গত গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সদরপুর উপজেলা সংলগ্ন ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের আদমপুর এলাকার নাউটানা এলাকায় কচুরিপানার ভেতর থেকে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে ভাঙ্গা থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে এসে হাসি বেগমের বাবা শেখ হাবিবুর ও মা সালমা বেগম মৃতদেহটি তার মেয়ের নয় বলে জানালেও পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর হাসি বেগমের বাবা ও ফুপু নিহারণ বেগম পায়ের আঙ্গুর ছোট ও গলায় কবজ আছে দেখে মৃতদেহটি হাসি বেগমের বলে সনাক্ত করেন। ময়না তদন্তের পর পুলিশ মৃত দেহটি হাসি বেগমের বাবার হাতে তুলে দেন গত ২৩ সেপ্টেম্বর। ওই দিন সন্ধ্যার শৌলডুবী মদিনাতুল কবরস্থানে ওই মরদেহ দাফন করা হয়।
কবর দেওয়ার দুইদিন পর হাসি বেগম ফোনে বাবাকে জানান তিনি বেঁচে আছেন। পরে গত সোমবার ভোরে সদরপুর থানার পুলিশ ময়মন সিংহ এর নান্দাইল থানা পুলিশের সহায়তায় জীবিত হাসি বেগমকে ফরিদপুরের সদরপুর থানায় নিয়ে আসেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে হাসি বেগম পরিচয়ে শৈলডুবি নূর এ মদিনা কবরাস্থানে যে নারীকে কবর দেওয়া হয়েছে সেই নারীটি কে, কি তাঁর পরিচয়, কোথায় তাঁর বাড়ি। লাশটি উদ্ধার হয়েছিল ভাঙ্গার থানার অধিনে মানিকদহ ইউনিয়নের আদমপুর এলাকার নাউটানা এলাকা হতে। ফলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা ওই থানার নেওয়ার কথা। হাসি বেগম হিসেবে পরিচয় পাওয়ার পর ভাঙ্গা থানার পুলিশ মৃতদেহটি ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত করে তার পরিবারের হাতে তুলে দেন গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে।
পরে জানাজা করে তাকে দাফন দেওয়া হয়। ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়ারুল ইসলাম জানান, ২০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া মৃতদেহটি হাসি বেগম হিসেবে সনাক্ত করেন তার বাবা ও ফুপি। তাদের মাধ্যমে সনাক্ত হওয়ার পরই ময়না তদন্তের পর মৃতদেহটি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন হাসি বেগম জীবিত অবস্থায় ফিরে আসায় বোঝা গেল হাসি বেগম নামে যাকে দাফন দেওয়া হয়েছে তিনি হাসি বগম নন। এটি অজ্ঞাতনামা অন্য কোন নারীর মৃতদেহ। মৃতদেহটি ১২ থেকে ১৫ দিনের পুরনো হওয়ায় সেটির সনাক্ত করার উপায় ছিল না। ওসি আরও বলেন, হাসি বেগম ফিরে আসায় এবং ওই লাশটি পরিচয় উদঘাটন করা জরুরী হয়ে পেেড়্ছ। এ অবস্থায় একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশার কথা হল পুলিশের পক্ষ থেকে মৃতের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এ পযায়ে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলাদায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এ মামলাটি দায়ের করা হয়নি। ওসি জিয়ারুল ইসলাম বলেন, পাশাপশি আশে পাশের থানায় নিখোঁজ সংবাদের তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। লাশ সনাক্ত করাসহ এ এ হত্যা রহস্য উদঘাটনের যথাযথ চেষ্টা করা হবে। এর অংশ হিসেবে আশেপাশের বিভিন্ন থানায় নিখোঁজ ডাইরি চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে। আমাদের এখন প্রধান কাজ হচ্ছে ২০ সেপ্টেম্বর অর্ধ গলিত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া নিারীর পরিচয় সনাক্ত করে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, পুলিশের প্রধান কাজ হচ্ছে ২০ সেপ্টেম্বর অর্গলিত যে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তার পরিচয় সনাক্ত করা। বাংলাদেশের একজন নাগরিকের এরকম মর্মান্তিক হত্যাকান্ড ঘটবে, তার নাম পরিচয় ও হত্যার কারণ উদঘাটন করা যাবে না এটি মেনে নেওয়া যায় না। আমি মনে করি পুলিশকে এ বিষয়ে তথ্য তালাশে আরও দায়িত্ব ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।
হাসি বেগম এখন কোথায়?
গত বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ফরিদপুরের আদালতে জবানবন্দী দেওয়ার পর বাবাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান হাসি বেগম। হাসি বেগমকে আদালত প্রাঙ্গনে তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পেয়ে সন্ধায় বাড়ি ফিরে যান তার বাবা শেখ হাবিবুর। গত বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হাসি বেগমের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে হাসি বেগমের বাবার ধারণা সে (হাসি) আবার ময়মনসিংহে তার নতুন প্রেমিকের কাছে চলে গেছেন। শেখ হাবিবুর বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বলেন, হাসির সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি। সে কোথায় গেছে তাও আমার জানা নেই। আমি জানার চেষ্টাও করিনি।
তার (হাসি) কোন মোবাইল নম্বর আমার কাছে নেই। হাসি বেগমের মা সালমা বেগম ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলেন, হাসি বেগম কোথায় আছে তা দিয়ে আপনি কি করবেন। প্রথম আলোর নান্দাইল প্রতিনিধি রমেশ কুমার দাস জানান, নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামান জানান, সদরপুর পুলিশের সহায়তায় উপজেলার জাহাঙ্গীর পুর ইউনিয়নের কড়ইকান্দি গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল হাসি বেগমকে। পরে তাকে সদরপুর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাসি বেগম আবার এখানে এসেছেন কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Leave a Reply