মোঃ সরোয়ার হোসেন, ভাঙ্গা : ফরিদপুরের সদর, ভাঙ্গা, সালথা, সদরপুর, আলফাডাঙ্গা, মধুখালি সহ উপজেলাগুলোতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রকল্পের টাকা প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায় সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমাজের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহনের জন্য এ প্রকল্পটি গ্রহন করে সরকার।
এ প্রকল্পটিতে ফরিদপুর সদর,ভাঙ্গা -সদরপুর -মধুখালি সহ সংশ্লিষ্ট উপজেলায় শিক্ষক নিয়োগ, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর তালিকা ও নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন না দেওয়া,বিদ্যালয়ের উপকরন,শিক্ষার্থীদের পোশাক,বিদ্যালয়ের জন্য ঘরভাড়া সহ যাবতীয় অর্থ আত্মসাতের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা”এসো জাতি গড়ি”(এজাগের) বিরুদ্ধে। লিড এনজিও এজাগ পার্টনার হিসেবে সুর্য্যমুখি সহ কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।
জানা গেছে, ভাঙ্গা ও সদরপুর সহ প্রতিটি উপজেলায় ৭০ টি করে কেন্দ্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় “এসো জাতি গড়ি” নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রতি ১৫ কেন্দ্রের জন্য ১ জন করে সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ১১ মাস অতিবাহিত হলেও বাস্তবে কোথাও পাঠদান করেনি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।অভিযোগ উঠেছে, কথিত রিসোর্স পার্সন,ট্রেইনার,কর্মকর্তা নিয়োগ,মাস্টার রোলে ভুয়া স্বাক্ষর দেখিয়ে প্রকল্পের সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছে এনজিওটি।
প্রতিটি কেন্দ্রে ৩ হাজার টাকা বাজেটে একটি করে ফ্যান, টিউবলাইট, পানির জার, স্টিলের ট্রাংক, সাইনবোর্ড, হাতলওয়ালা চেয়ার, টুল, শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড, টিচিং এইডস এবং গেমস উপকরণ দেওয়ার কথা থাকলেও এর কিছুই কেনা হয়নি। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের নামে কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের এডিপির অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য” এসো জাতি গড়ি “নামে একটি এনজিও অনুমতি পায়।
এ প্রকল্পের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রকল্পের শুরুতেই কেন্দ্র নির্মাণ, আসবাবপত্র ও উপকরণ সরবরাহের জন্য বহুল প্রচারিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহŸান করার কথা থাকলেও মানা হয়নি এ নিয়ম। ঘর নির্মাণ ও উপকরণ সামগ্রী ক্রয় না করে অফিস রেজুলেশনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন খাতের প্রায় কয়েক কোটি টাকা তুলে নিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিওটি। অথচ শুরু থেকে গত ১১ মাসের বেতন-ভাতা পাননি কোনো শিক্ষক। এ নিয়ে খোদ কর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষক জানান প্রকল্পের, প্রকল্পের পরিচালক আমাদের সাথে প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছেন। স্টা¤েপর মাধ্যমে স্বাক্ষর নিয়ে বেতনসহ পাওনাদি না দিয়ে টালবাহানার আশ্রয় নেয়। সংশ্লিষ্ট ম্যানেজার এবং সুপারভাইজার স্থানীয় চাপে অনেকে গা ঢাকা দেয়। শিক্ষকরা কিছু দিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালালেও কিছুদিন পর এখন আর তাদের কর্মকান্ড চোখে পড়েনি। শুধু সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সরকারের টাকাগুলো লুটপাট ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না। এ প্রকল্পের সুলেখা আক্তার,সুমী খাতুন কনা,ছালেহা বেগম,সবুজ মোল্লা,রফিকুল ইসলাম সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষিক জানান,আমরা এখন পর্যন্ত বেতন-ভাতা পাইনি।
তারা অভিযোগ করে জানান,বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন ফল পাইনি। বেতন-ভাতা না পেলে আমরা কীভাবে চলব। ভাঙ্গা উপজেলার প্রকল্পের ম্যানেজার নিতাই চন্দ্র দে জানান, আমরা শিক্ষকদের দাবীসমুহ নিয়ে প্রকল্পের পরিচালকের সাথে কথা বলেছি। তাদের পাওনা সহ আমার প্রাপ্য পাওনাদিও পাইনি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ। অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত এনজিও নারী বিকাশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরে আনা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্বে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Leave a Reply