স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরে চালককে হত্যা করে অটো রিক্সা নিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি গামছা এবং নিহত অটো রিক্সা চালকের খোয়া যাওয়া দুটি মুঠোফোনের মধ্যে একটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ দাবি করেছে জেলা পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) আব্দুল্লাহ বিন কালাম।
গত শনিবার (১৫ জুলাই) ফরিদপুর সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়নের গজারিয়া পাটপাশা সেতু এলাকার দক্ষিণ পাশে জনৈক মান্নান খালাসীর মেহগনি বাগানের ভিতরে একটি খেজুর গাছের নিচে গলা গামছা পেচানো অজ্ঞাত এক তরুণের (২৩) মৃতদেহ উদ্ধার করে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ। ওই দিন রাতে সদরপুর উপজেলার আকটেরচর ইউনিয়নের হালিম চৌধুরীডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা ইকলাছ মোল্লা ওই তরুণকে তাঁর ছেলে রবিন মোল্লা হিসেবে সনাক্ত করেন। রবিন মোল্লা অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
এ ঘটনায় গত সোমবার (১৭ জুলাই) ইকলাছ মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় হত্যাসহ রিক্সা ছিনতাই এর অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) আব্দুল্লাহ বিন কালাম বলেন, নিহত অটোরিক্সা চালক রবিন মোল্লার দুটি মুঠোফোনসেট নিয়ে যায় ঘাতকচক্র। তার সুত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল বুধবার (১৯ জুলাই) ভোররাতে চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের বিএসডাঙ্গী এলাকা হতে এ হত্যাকান্ডের মূল হোতা নাঈম খানকে (৩১) গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে মৃতের একটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়।
পরে তার সহয়তায় ছিনতাই হওয়া অটো রিক্সা ক্রেতা শেখ হালিমকে (৪২) চরভদ্রাসনের গাজীরটেক ইউনিয়নের চর অমরাপুর এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ছিনতাই হওয়া রিক্সাটি তার জিম্মা থেকে উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, মৃত রবিন ও ঘাতক নাঈম পূর্বপরিচিত। রবিন অটোরিক্সা এবং নাঈম লেগুনা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিছুদিন আগে নাঈমের লেগুনার সাথে রবীনের অটোরিক্সার ঘষা লাগলে রবিন নাঈমকে মারধোর করে। এতে নাঈম ক্ষুব্ধ ছিল। পরে গত শনিবার ফরিদপুর শহরের যৌন পল্লিতে যাওয়ার কথা বলে নাঈম ও রবিন একসাথে ফরিদপুরে আসে।
ফরিদপুরে আসার পথে গজারিয়া এলাকায় এলে উপজেলার অটো রিক্সা শহরে নিয়ে গেলে পুলিশ ধরবে একথা বলে নাঈম রবিনকে ফরিদপুরে যেতে বলে এবং সে অটো রিক্সাটি নিরাপদ জায়গায় রেখে আসার কথা বলে রবিনকে ফরিদপুর শহরে পাঠিয়ে দেন। রবিন ফরিদপুর চলে গেলে নাঈম অটোরিক্সাটি ১৫ হাজার টাকায় শেখ হালিমের কাছে বিক্রি করে ফরিদপুরে যৌনপল্লিতে রবিনের কাছে যায়। পরে তারা একটি লেগুনাতে করে ফেরার পথে গজারিয়া নামে। পরে নাঈম রিক্সা দেওয়ার কথা বলে পাটপাশা সেতু এলাকার দক্ষিণ পাশে জনৈক মান্নান খালাসীর মেহগনি বাগানের নিয়ে পিছনের দিকে থেকে রবিনের গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শৈলেন চাকমা, ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল, কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের, পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল গফ্ফার, এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া নাঈম ও শেখ হালিমকে বুধবার দুপুরেই আদালতে হাজির করা হবে। তারা স্বীরোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন বলে জানিয়েছে। যদি জবানবন্দি না দেন তাহলে তাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
Leave a Reply