বিজয় পোদ্দার, ফরিদপুর : চারিদিকে ঘন কুয়াশা আর হিমশৈত বাতাসে নাগরিক জীবন যখন যবুথবু দরিদ্র মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম তখনও সক্রিয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভেতর দিয়ে পুলিশ সুপারের অফিস সংলগ্ন ক্যাফে নিমন্ত্রণে এলাম এক কাপ গরম কফি খাবো বলে। তখন চির চেনা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান জাকের পার্টির সভাপতি মুশিউর রহমান জাদু মিয়া আতিথিয়তায় এক গাল মিষ্টি হাসিতে বললেন কেমন আছেন দাদা ইত্যাদি। এরই মধ্যে কানে এলো “এই মুড়ি এই চিরার মুয়া আছে মুয়া” খেলে বাল লাগবে……।
ডাকলাম তাকে প্রতি পিচ ১০ টাকা করে আমরা কয়েকটি খেয়েও ফেললাম। তখন তার শরীর শীতে কাপছিল আলাপ হলো খানিক সময় নাম তার শহীবুর রহমান (৩০) দুই সন্তানের জনক। জীবনের সংগ্রামে অর্থ উপার্জনের আসায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফরিদপুরে এসে প্রায় মাস খানিক ধরে পথে পথে ঘুরে মুয়া বিক্রি করছেন তিনি। বাজার থেকে মুয়া কিনে প্রতি প্যাকেটে ১০ টাকা লাভে বিক্রি করেন তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাছির নগর থানার ধর মন্ডল গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন রঘুনন্দনপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
কেমন চলছে এই পেশা? প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, স্যার সব দিন পথে ঘুরতে পারি না মাঝে মধ্যে ঘার-শরীর ব্যাথা হয়ে যায় সেই দিন আর আয় হয় না। যা উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার চলে যায়। প্রচন্ড শীতে পায়ের তালু ও মাথা ব্যাথা হয়ে আসে। তারপরও সৎ ভাবে উপার্জনে আনন্দ পাই চুরি ডাকাতি করে তো আর খাই না। ফরিদপুরের মানুষ কেমন জানতে চাইলে? সে জানায় আউলিয়া-সাধকের দেশ শাহ্ ফরিদের নাম স্পষ্ট না বলতে পারলেও সে জানে তার নামেই ফরিদপুর।
এ ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, কবি জসীম উদ্দিন, বিশ্ব ওলি খাজা বাবা, প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর, দুদু শাহ্, বিসমিল্লাহ শাহ্সহ অসংখ্য আলোকিত ব্যক্তিত্বের জেলা হিসাবে এই মাটিতে কাজ করতে পেরে আর ভালো লাগে। এই এলাকার মানুষ খুব আলাপী এবং পরউপকারী বলেও তার ভালো লাগে। এরপর আর তাকে বিলম্ব করালাম না সে মুয়ার বোঝা কাধে করে ব্যস্ত শহরের ভিড়ে ছুটে চললো। আর আমি ভাবতে থাকলাম মানুষের জীবনে প্রতিদিনই কত না সংগ্রাম করে চলতে হয়। দারিদ্রতার মেঘ ভেঙ্গে জীবনের সংগ্রাম করে যাওয়া কিসের কম গৌরবের।
Leave a Reply