স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি বর্তমান থাকার পরও সেটি বিলুপ্ত না করে নতুন করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর নতুন আহবায়ক ও তিন নতুন যুগ্ম আহ্বায়কের ‘পদায়ন’ দিয়ে কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। নতুন এই কমিটিকে ‘অগঠনতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে ওই কমিটি বাতিলের আহবান জানিয়েছেন আগের কমিটির আহবায়ক মনিরুল হাসান মিঠু সমর্থিত অংশ। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের শামসুদ্দিন মোল্লা মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তারা। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে প্রেসক্লাব চত্ত¡রে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আগের কমিটির আহবায়ক মনিরুল হাসান মিঠু। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ করেই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে ফরিদপুর পৌর আওয়ামীলীগের একটি আহবায়ক কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের আহবায়ক কমিটি রয়েছে। একটি কমিটি থাকা অবস্থায় সেটি বিলুপ্ত না করে নতুন আরেকটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও দলীয় গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ। তিনি বলেন, চিঠিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও আমাদের জানামতে গত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গত সভায় ফরিদপুর পৌর কমিটি বিষয়টি আলোচনা হলেও কোন সিদ্ধান্ত হয় নাই।
মনিরুল হাসান বলেন, চিঠিতে বলা হয়েছে আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক পদায়ন করা হইল। ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি থাকা সত্ত্বেও নতুন করে আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক পদায়ন সম্পূর্ণ অসাংগঠনিক। যা আমাদের বিস্মিত করেছে। আমরা অবিলম্বে উক্ত কমিটি বাতিলের দাবী জানাই। লিখিত বক্তব্যের বাইরেও কথা বলেন মনিরুল হাসান। তিনি বলেন,ফরিদপুরের পৌর কমিটি নিয়ে কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান শেখ হাসিনার কাছে একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়। সেখানে আমাদের কমিটির ব্যাপারে বলা হয়, আমরা কোনও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ করছি না।
আমরা শুধু ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ.কে. আজাদের নির্বাচনী প্রচারণা করে বেড়াচ্ছি। তখন ওই সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ফরিদপুরের আহবায়ক কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য দলীয় প্রধানের অনুমতি চান। তখন সেখানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ প্রধানমন্ত্রীকে জানান,পৌর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা। এ কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক এব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত দেননি, বলেছেন এটা পরে সমাধান করা হবে এবং নির্বাচনের আগে আর কোনও কমিটি দেওয়া হবেনা ।
তারপরও দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতির সুযোগে আমাদের দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের পরামর্শে মির্জা আজম নতুন আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মনিরুল হাসান সমর্থিত অংশের নেতা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন,নতুন এই কমিটির অনুমোদনে মির্জা আজমকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন ফরিদপুরের দুই প্রেমিডিয়াম সদস্য। এই দুজনের পরামর্শক্রমে পুরাতন আহবায়ক কমিটি না ভেঙ্গে নতুন আহবায়ক কমিটি দিয়েছেন মির্জা আজম।
ফরিদপুর-১ ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্যের ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের কমিটি নিয়ে এমন আগ্রহ কেন? জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, নিজ এলাকায় তাদের জনপ্রিয়তা কেমন তা আপনারা ভালোই জানেন। এদের দুজনের ফরিদপুর-৩ আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে। এজন্যই তারা ফরিদপুর সদরের রাজনীতি নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছেন। তিনি বলেন,অনেকে দূরে থেকে ভাবতেছে বিএনপি এবার নির্বাচনে আসবে না সেই সুযোগে এমপি হয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ঘোষিত পৌর কমিটিতে তাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে এতে বোঝা যায় ঘোষিত পৌর কমিটি বাস্তবোচিত কোন কমিটি হয়নি। পাশাপাশি আমরা সরকারি চাকুরী করিনা, এক্ষেত্রে পদায়নের কোন সুযোগ নেই।
গত রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকে দেওয়া ‘ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন প্রসঙ্গে’ এক চিঠিতে জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ বরাবরে আপনাদের প্রেরিত প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের পৌর শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হল। চিঠিতে আরও বলা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে সহিদউদ্দীন আহমেদ এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে অমিতাভ বোস, নজরুল ইসলাম মৃধা ও নূরুল আলমকে পদায়ন করা হল।
প্রসঙ্গত গত ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর মির্জা আজম স্বাক্ষরিত যে পৌর আওয়ামী লীগের ৬৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদ দেওয়া হয় সেখানে আহ্বায়ক ছিলেন মনিরুল হাসান। এবং তিনজন যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন সাহিদউদ্দীন আহমেদ, মনিরুজ্জামান ও বদিউজ্জামান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ বলেন, এ চিঠিতে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক করা হয়েছে। আমি নির্বাহী কমিটির ওই সভায় উপস্থিত ছিলাম। আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভায় ফরিদপুরের পৌর কমিটি ভেঙ্গে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে এ জাতীয় কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
Leave a Reply