স্টাফ রিপোর্টার : গত দুই মাস ধরে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে দুঃসহ দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে ফরিদপুর পৌরসভার একটি ওয়াডের্র ৩০টি পরিবারের অন্তত দেড় শতাধিক সদস্য। পাশাপাশি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ প্রাঙ্গন নিমজ্জিত হয়ে থাকায় স্বাভাবিক কাজ ব্যহত হচ্ছে। এ অবস্থায় গত তিনদিনের ভারি বর্ষণের ফলে জলাবস্থার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। পৌরসভা পাইপ দিয়ে পানি অপসারণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। পানি সরে যাওয়ার জন্য সড়ক সংলগ্ন এলাকায় কোন ব্যবস্থা না থাকায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, প্রতিবছর বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতার এ বিপদ তাদের ললাটের লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে যে বছর বৃষ্টি বেশি হয় সে বছর দূর্ভোগের কোন সীমা থাকে না। এ ঘটনাটি ফরিদপুর পৌরসভার ব্রাহ্মণকান্দা এলাকায় ছয় নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের অধীনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ি রাস্তার মোড় এলাকার নজরুল মুন্সীর ভ্যারাইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে দক্ষিণ দিকে বেলায়েত হোসেনের বাড়ি পর্যন্ত চলে গেছে একটি সড়ক। নাম মন্ডল বাড়ী সড়ক। দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ওই সড়কের ৫০০ মিটার অংশ পানেতে ডুবে আছে।
গতকাল রবিবার (৮ অক্টোবর) দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্রাহ্মকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আব্দুল হাদী গণি মসজিদ এলাকার সড়ক এবং সড়ক সংলগ্ন আশেপাশের বাড়িগুলির প্রাঙ্গন পানিতে ডুবে আছে। স্কুল ও মসজিদ প্রাঙ্গণ পানিতে টইটম্বুর অবস্থা। পাশাপাশি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে ওই এলাকার অন্তত ৩০টি পরিবার। এর মধ্যে বেলায়েত হোসেন, ইসমত আরা, ফাতেমা বেগসহ এলাকার পাঁচটি বাড়ির ভিতরে পানি রয়েছে। অপর বাড়িগুলির উঠান এবং কোন কোন বাড়ির রান্না ঘর পানিতে ডুবে আছে। এই এলাকার বাড়িগুলি মূলত সেমি পাকা ধরনের। একটি বাড়ি আছে ডোয়া কাঁচা। ওই এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ মন্ডল (৫৪) বলেন, ঘর থেকে বাইর হলেই পানি পাড়াতে হয়। জুতা স্যান্ডেল হাতে নিয়া পানি পাড়িয়ে সড়কের শুকনা অংশে উঠতে হয়।
গত দুই মাস ধরে বড় বিপদের মধ্যে আছি, দেখার কেউ নাই। ওই এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ ফাতেমা বেগম (৬৩) বলেন, রান্না ঘর তলায় রইছে। রান্না করতে পারছি না। বসত ঘরে আলগা চুলায় রাইন্ধা কোন রকমে বাঁইচা আছি। তাছাড়া রয়েছে সাপের উপদ্রপ। কখন কার বাড়িতে সাপ ঢুকে যায় সে আতংকে থাকতে হয়। আরেক বাসিন্দা গৃহবধূ জোহরা বেগম (৪৩) জানান, পোলাপানদের স্কুলে পাঠাইয়া শান্তিতে থাকতে পারি না। আগে পোলাপানদের স্কুলে নিয়া স্কুলের মাঠে বসে থাকতাম। স্কুলের মাঠ তলায় গেছে বইলা সে সুযোগ নাই। ব্রাহ্মকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এলিজা ইয়াসমিন। তিনি জানান, পানি থাকায় আমরা গত দুই মাস ধরে মাঠে এসেমবিø করতে পারছি না। বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে ২০৭জন।
জলাবদ্ধতার কারনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। আগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৭৫ জন শিক্ষার্থী স্কুলে হাজির হতো। পানির কারনে শিক্ষার্থীদের হাজিরা ৭০ থেকে ৮০ তে নেমে এসেছে। আব্দুল হাদী গণি মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আক্কাস মন্ডল বলেন, আমাদের জলাবদ্ধতা, আমাদের বেদনার কথা আমরা পৌরসভাকে জানিয়েছি। তারা বলেছে এ সমস্যার সমাধান করবেন। কিন্তু দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখছি না। তিনি বলেন, বাইপাস সড়কটি হওয়ার পর থেকে আমাদের এ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ শুরু। যেবার বৃষ্টি বেশি হয় সেবার দুর্ভোগের কোন সীমা পরিসীমা থাকে না। ওই ওয়ার্ডের (৬ নম্বর) কাউন্সিলর মো. আরাফাত হোসেন জানান, ১০ বছর আগে বাইপাস সড়কটি হওয়ায় ওই এলাকা দিয়ে পানি নিস্কাশনের তিনটি পথ বন্ধ হয়ে যায়।
আরেকটি মুখ ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছেন মালিক। ফলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কাউন্সিলর মো. আরাফাত হোসেন আরও বলেন, তিনি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোসের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ওই এলাকার গৌর দত্ত ও হাফিজার মন্ডলের ব্যাক্তিগত জায়গা কেটে পাইপ দিয়ে পানি অপসারণের জন্য দ্রæত উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘এ কাজটি আরও আগেই শেষ করার উচ্ছে ছিল’-মন্তব্য করে তিনি বলেন, নতুন করে আবার তিনদিন ভারি বৃষ্টি হওয়ায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে।
Leave a Reply