ফরিদপুরে দিনব্যাপী সম্মেলনে ক্ষোভ ঝাড়লেন নারী জনপ্রতিনিধিরা
স্টাফ রি পোর্টার : ফরিদপুরে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকারের আওতায় দিনব্যাপী সম্মেলনে নারী জনপ্রতিনিধিগণ অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাসিক মিটিংয়ে তাদের ডাকা হয়না। মিটিং না করেই রেজুলেশনে তাদের স্বাক্ষর নেয়া হয়। তাদের কার্যপ্রণালীর ম্যানুয়াল দেখতে দেয়া হয়না। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, সরকারি ভাতা ও অন্যান্য সুবিধার বিষয়গুলো নারী জনপ্রতিনিধিদের মাঝে আনুপাতিক হারে বন্টন করা হয়না। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা।
এতে ইএএলজি প্রকল্পভুক্ত ফরিদপুরের ৯টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ৩০টি ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেম্বার ও সংরক্ষিত নারী সদস্যগণ অংশ নেন। ফরিদপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো: আসলাম মোল্যার সভাপতিত্বে সম্মেলনে অংশ নেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তাসলিমা আলী ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাসউদা হোসেন। সঞ্চালনা করেন ইএএলজির ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলেটেটর মনির হোসেন মজুমদার। এ সময় মধুখালীর বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য নুরুন্নাহার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ১৭টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে ৯টির সভাপতি তিনি।
তিনি অথচ এসব কমিটির মিটিং করা হয়না। আবার মিটিং করলেও তাকে ডাকা হয়না। তাদের কথা কেউ শোনে না। বাগাটে দুটি হাট ও ইউপি ভবনের সামনে একটি পুকুর মিটিং না করেই চেয়ারম্যান ইজারা দিয়েছেন। মেম্বাররা জানেননা। তিনি বলেন, নারী জনপ্রতিনিধি হয়ে ভোটারদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে পারিনা। জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছি। এখন তাদের কাছে মুখ দেখাতে পারছিনা। টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য শেফালী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান সাহেব কোন মিটিংয়ে ডাকেন না। বরাদ্দ আসলে চেয়ারম্যান আমাদের কিছুই বলেন না এবং পরিষদের আয়- ব্যয় সম্পর্কে আমাদের জানান না।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য পদে নারীদের কোন মূল্যায়ন নেই। ভাঙ্গা পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলার পারুলী আক্তার বলেন, মহিলা কাউন্সিলর পদে নারীদের ডেকে এনে একপ্রকার অপমান করা হয়। মহিলা সদস্যদের একদমই মূল্যায়ন নেই। নারীদের তৃণমূল থেকে মূল্যায়ন করলে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এসময় প্রায় সকল নারী জনপ্রতিনিধিগণই প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা বলেন, নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরেই অবহেলার শিকার হচ্ছেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও পরিষদে তাদের নেই সুনির্দিষ্ট কোন কাজ, নেই কোন মূল্যায়ন। দায়িত্ব পালনে প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা।
তারা বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাদের কোন ভূমিকা নেই। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের নেই কোন সম্পৃক্ততা। চেয়ারম্যান বা মেয়রের অনুপস্থিতিতে কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য প্যানেল চেয়ারম্যান বা মেয়রের তালিকায় তাদের রাখা হয় না। তারা অভিযোগ করেন, নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিলেও এখন তাদের কাছে কোনপ্রকার জবাবদিহিতা করা সম্ভব হচ্ছেনা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে নারীরা নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) মোহাম্মদ আসলাম মোল্যা বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার কাঠামোতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হলে তৃণমূল থেকেই তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। তৃণমূলে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে ইএএলজি প্রকল্পভুক্ত পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ হবে উন্নয়নের মডেল।
পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে নারীরা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এসব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বেশি বেশি বাড়াতে হবে। নারী জনপ্রতিনিধিদের পরিষদের আইন সম্পর্কে জানাতে হবে। সম্মেলনে নারী জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণ, বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে নারী উন্নয়ন ফোরাম পরিচালনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
Leave a Reply