সবুজ দাস, ফরিদপুর : জন্মমৃত্যু নিবন্ধনের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য অবসর প্রাপ্ত সচিব মোঃ আযুব আলী মোল্যা বিপুল পরিমান সরকারি অর্থ আত্মসাত ও পরিষদের চার্জ বুঝে না দেওয়ায় কাঙ্খিত সেবা দানে শুরু হয়েছে চরম ভোগান্তি। আর এমনই অভিযোগ এনে গত ১১ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন পরিষদের নবনিযুক্ত সচিব মো: রইচ উদ্দিন খান। যদিও অভিযুক্ত সচিব আত্মসাৎকৃত ঐ টাকা একাধীকবার ফেরত দেওয়ার কথা বলেও সময় ক্ষেপন করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ঐ অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে ৬টি ভূয়া চালানসহ সচিবের আইডির অপরিশোধিত অর্থ মিলে আযুব আলী ১০ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬ শত ৬৬ টাকা আত্মসাৎ ও পরিষদের হল রুমসহ সচিব কক্ষে ৬টি তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় মার্চের ভিডব্লিউবি কার্ডের চাল এবং ঈদুল ফিতরের ভিজিএফ এর চাল বিতরন বন্ধ থাকে। যদিও তা বিতরনের মেয়াদ উত্তির্ণের ঈদ মুহুর্তে এসে বন্টন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ৮ টি চালানে ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৬ শত ৬৬ টাকা পরিশোধ দেখালেও এর মধ্যে ১ নং চালানে ৫ হাজার ও ৮ নং চালানে ৪০ হাজার করে দুই চালানে মোট ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও বাকি ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬ শত ৬৬ টাকার ৬টি চালানই ভূয়া। এ ছাড়াও জন্মমৃত্যুসনদের ৮ লক্ষ ৯৯ হাজার ২ শত টাকা হাতে পেলেও তা সচিবের আইডি থেকে পরিশোধ না করেই অবসরে গিয়েছেন তিনি।
এদিকে গত ১ মাসেরও বেশি সময় যোগদান করে দায়িত্ব বুঝে না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে নবনিযুক্ত সচিব জানান তার অফিসিয়াল আইডির নাম পরিবর্তন করতে গেলে অপরিশেধিত অর্থের পরিমান শূন্য দেখাতে হয়। আত্মসাৎকৃত ঐ টাকা বাদেও ট্রেড লাইসেন্স, বিদ্যুৎ বিল ও ভ্যাটসহ আরো ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকার কোন হদিস নেই। জন্মমৃত্যু নিবন্ধনের সচিবের আইডির অপরিশোধিত অর্থ শূন্য না করায় সচিবের নাম পরিবর্তন করা যাচ্ছেনা বিধায় জন্মমৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিষদের একাধীক সূত্র জানায় অতিরিক্ত অর্থ চাওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিসহ আয়ুব আলী দায়িত্বে থাকাকালীন সপ্তাহে তিন চার দিন মাত্র কয়েক ঘন্টা করে অফিস করায় সেবা গ্রহিতারা জিম্মি হয়ে পরেছিলো তার নিকট।
এর আগে দাপ্তরিক কাজে অবহেলা, জন্মমৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ভাতা পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিপুল পরিমানের অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ফরিদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগকে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছিলো তার বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত সচিব আইযুব আলী বলেন, আমার নামের আইডি দিয়ে উদ্যোক্তা ওমর ফারুখ কাজ করত। তার অনিয়ম এসে পড়েছে আমার ওপর। তবে পরিষদের গড়মিলের সরকারি টাকা আমি ফেরত দিয়ে দিবো। যদিও সচিবের অবসরে যাওয়ার আগে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নজরে না আসার কথা উল্লেখ করে সরকারি সম্পুর্ন টাকাই সচিবের হাতে তুলে দিতেন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা ওমর ফারুক।
এ বিষয়ে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, নিবন্ধনের সরকারি ফি সচিবের হাতে তুলে না দিলেই আমাকে জানাতেন আয়ুব আলী। অথচ উদ্যোক্তা ওমর ফারুক ওই টাকা সচিবের হাতে তুলে দিলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা পরেনি। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালী অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অভিযুক্ত সচিব টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সময় চাওয়ায়, তাকে কিছুটা সময় দেওয়া হলেও সঠিক সময়ে যদি সে এই টাকা ফেরত না দেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply