বিজয় পোদ্দার, ফরিদপুর : বেঁচে থাকার প্রয়োজনে আমাদের সমাজে কত কিছুই না করে মানুষ। সমাজ শোষণের বৈষম্যময় অর্থনীতি যখন এক দিকে পর্বতসম আবার অন্যদিকে কেবলই দারিদ্রতা আর সংকটে চলছে মানুষের জীবন। ১৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে কাজ শেষে মুজিব সড়কে আসি। ১৬-১৭ বছরের এক রিক্সা চালক শাহাদাৎ গাজী সামনে এসে দাড়ালো ভাই যাবেন যাবেন হ্যা যাবো। রিক্সায় উঠতেই খানিকটা দিধায় পড়ে গেলাম। শিশু কিশোর চেয়ারা হীম শৈত্য বাতাসে তার শরীর কাপছিল খানিকটা মায়া হলো। আতিথিয় সন্মোধনে তাকে দুটো বিস্কুট কলা খাওয়াবার কথা বললাম।
খানিকটা লজ্জা পেল গরীব মানুষ হলেও ভদ্রতা আছে বলল কেন খাবো? আমি ভাবলাম তাইতো পথে ঘাটে কত কি হয়। তারপর আমার পরিচয় দিয়ে ওর কিছুটা জানার চেষ্টা করলাম। কোথায় বাড়ি এই বয়সে কেনই বা রিক্সা চালাতে পথে নেমেছে। বাড়ি তার নগরকান্দা থানার গজারিয়ার বাড়ৈ ডাঙ্গী গ্রামে। তার পিতাও একজন রিক্সা চালক। সংসারে দুই ভাই এক বোন বড় ভাই আকাশ প্রতিবন্ধী, বোন বাড়িতেই থাকে সে জানায় বাপে দেনা হয়ে যাওয়ায় জীবনের প্রয়োজনে এক বছর ধরে ভাড়ায় প্রতিদিন ২০০ টাকায় ব্যাটারী চালিত রিক্সা নিয়ে উপার্জনের জন্য পথে নামে।
কেমন আয় হয় জানতে চাইলে বলে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা কোন কোন দিন ৫০০ টাকাও হয়। তয় ঠান্ডা বেশি পড়লে লোক পাওয়া যায় না। এই ঠান্ডায় কেন রিক্সা চালাতে বের হয়েছো উত্তরে বলে স্যার এমনিতে কেউ কি ভাত দিবো? দিবো না! চুরি ডাকাতি করি না। রিক্সা চালায়ে খাই..। গরীব মানুষতো কি করুম। তোমার মোবাইল নাম্বার কত জানতে চাইলে সে বলে “আমার আমি তো নাই তার আবার মাথা কি?” আমি থমকে গেলাম। রিক্সা চালক শাহাদাতের এমন কথার উত্তরে আমি কি বলবো দেশের লাখো শাহাদাতের দায়িত্ব আমি কি নিতে পারবো পরবো না কিন্তু আমরা সম্মিলিত ভাবে স্ব স্ব এলাকার ধন্যাঢ্য ব্যক্তিরা যদি মনে করেন তারা তা পারেন।
কিন্তু আমাদের বোধ আর মানবিকতার শরীরে কিসের যে অসুখ বাসা বেধেছে। আমাদেরকে দেশাত্ববোধ আর মনবিক বোধের জন্য নতুন চাষাবাদ করতে হবে। অবশেষে রিক্সা চালক শাহাদাৎ বললেন স্যার হাসিনার সরকারকে ভাল রাখুক আল্লাহ আমার প্রতিবন্ধী ভাই তিন মাস অন্তে ভাতা পায় ২,১০০ টাকা ও সময়ের গতিতে জীবনের সংগ্রামের প্যাডেল মেরে উপার্জনের পথে ছুটলো আমি সময়ের প্রয়োজনে একদরিদ্র রিক্সা চালকের খানিক গল্প তুলে ধরলাম। যদি কোন মানুষের কাজে আসে।
Leave a Reply