হারুন আনসারী, ফরিদপুর : সুন্দরবনে মালঞ্চ নামে একটি নদী রয়েছে। কিন্তু ফরিদপুরেও যে এই নামে একটি নদী রয়েছে তা অনেকেই হয়তো জানেনা। সাংবাদিক শ্রাবণ হাসানের কথাতেই জানা গেলো এমন বিস্মৃতির কথা। বললো, “এমন একটি সুন্দর নামের নয়নাভিরাম নদী রয়েছে আমাদের সালথায় অথচ তেমনভাবে কখনো জানা হয়ে উঠেনি।” সেদিন আটঘর ইউনিয়নের গৌড়দিয়া বাজারে একটি চায়ের দোকানের পিছনে বেঞ্চে বসে নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে জানা গেলো এই নদীর কথা। নদীটি এখনো হারিয়ে যায়নি, অথচ যে শুনে সেই বলে ভারি সুন্দর নামতো নদীর।
আর এই নদীর এমন সুন্দর নামটিই নাকি এখন হারাতে চলেছে। অনেকে এটিকে কুমার নদেরই অংশ মনে করে। কেউ ভাবে খাল! যতটুকু জানা গেছে, সালথার গট্টি বাজারে কুমার নদ থেকে শুরু হয়েছে এই মালঞ্চ নদী। এরপর আরো কয়েকটি গ্রাম ছাপিয়ে নদীটি ভাওয়ালের কাছে কুমার নদের সাথে মিশেছে। মালঞ্চ নদীর নামকরণের ইতিহাস: স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক সূধীর দত্ত ওরফে উত্তম জানান, নবাব সিরাজউদ্দৌলারও আগে সুজাউদ্দৌলার আমলে স্থানীয় জমিদার ছিলেন প্রতাপ সিংহ।তার মেয়ের নাম ছিলো মালঞ্চ। মেয়েটি নৌকাডুবিতে মারা গেলে তার নাম অনুসারে এই নদীর নাম হয় মালঞ্চ। তিনি জানান, সালথা বাজারের ব্রীজ থেকে নদীটি শুরু হয়ে সিংহপ্রতাপ, গৌড়দিয়া, সলিয়া, সেনহাটি, খাগৈড়, গোয়ালপাড়া, গোবিন্দপুর, দুর্গাপুর এই আটটি গ্রামের উপর বয়ে গেছে।
নাব্যতা:
নদীটি সম্প্রতি খনন করা হয়েছে। এখন শুকনো মৌসুমে হাটু পানি থাকে। আগে নদীটি শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যেতো। গ্রামের সহজসরল প্রকৃতির মতোই স্নিগ্ধতা মেশানো তার ছুটে চলা। বর্ষায় পানিতে ভরে উঠে তার কোল। গ্রামের কৃষকেরা তার বুকে পাট জাগ দেয় এসময়। পাটের পঁচা হাজামজা পানি নিয়েই বয়ে চলে সে। শুকনো মৌসুমে খড়ায় পানি শুকিয়ে জেগে উঠে তার উদাম শরীর। এজন্য হয়তো এতো সুন্দর একটি নামের এই নদীটি সকলের অগোচরে হারিয়ে যাচ্ছে। ফরিদপুরের সরকারি-বেসরকারি নথিপত্রে কোথাও নেই মালঞ্চ নামের এই নদীর অস্তিত্ব। তরুণ প্রজন্ম এই নদীর নামই হয়তো জানেনা বেশিরভাগ। নদীটি রক্ষা যেমন জরুর, তেমনি মালঞ্চ নদীর নামটিও সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ থাকা দরকার। নদীমাতৃক বাংলাদেশে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে আরো অনেক নদনদীর মতো মালঞ্চের রুপলাবণ্য ফিরিয়ে আনা সময়ের অপরিহার্য দাবি।
Leave a Reply