স্টাফ রিপোর্টার : আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। ফরিদপুরের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন এক হাজারের অধিক নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। ফরিদপুরের ডা.জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিপুল পরিমাণে শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অভিভাবকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে ফরিদপুরের ডা.জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের উপচে পড়া ভীড়। বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন তারা। নেবুলেইজার দিয়ে শিশুদের শ^াস-প্রশ^াস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
ডা.জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারি মো: টিটু মন্ডল জানান, হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভীড় বাড়ছে। প্রতিদিন আউটডোরে ৮শ থেকে ৮শ ৫০ জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন ৮০ থেকে ৮৫ জন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। ফরিদপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স গোলাপী বেগম জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ঠান্ডা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১শ ৭৭ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে, আবার কিছু শিশু সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। শরীয়তপুর থেকে আসা সালমা বেগম বলেন, আমার বাচ্চার বয়স ৮মাস। হঠাৎ করেই ঠান্ডা লেগেছে। প্রাথমিকভাবে শরীয়তপুরে চিকিৎসা করিয়েছিলাম, কিন্তু কমেনি। শ^াস নিতে সমস্যা হচ্ছিল, সেকারনে আজ সকালে শিশু হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তার দেখিয়েছি, ডাক্তার বলেছে হাসপাতালে ভর্তি করতে। ভর্তি করেছি চিকিৎসা চলছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর থেকে আসা সালাম শেখ বলেন, আমার ছেলের বয়স দুই বছর। দুই দিন হলো ঠান্ডা লেগেছে, সাথে ডায়রিয়া। সকালে শিশু হাসপাতালে এনে ছেলেকে ডাক্তার দেখিয়েছি। ওষুধ লিখে দিয়েছে, এখন বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। মাদারীপুরের রাজৈর থেকে আসা শারমিন আক্তার বলেন, আমার ৯ মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। ঠান্ডা লেগেছে, শ^াস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তার দেখিয়েছি, ভর্তি করতে বলেছে। ডাক্তার বলেছে, কয়েকদিন সময় লাগছে, ঠিক হয়ে যাবে। ডা.জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: পার্থ প্রতিম শিকদার বলেন, রাতে ঠান্ডা পড়ায় শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আগের বছরের তুলনায় এবারের ঠান্ডাজনিত রোগ সেরে উঠতে একটু সময় লাগছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে শিশুদের আক্রান্তের হার অনেক বেশি। চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকদের বিভিন্ন নিয়ম অনুসরন করতে বলা হচ্ছে। তবে চিন্তার কোনো কারন নেই।
ডা.জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক মো: সালাহউদ্দিন ফরিদ বলেন, গত এক সপ্তাহে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে। প্রতিদিন ৮শ থেকে ৮শ ৫০ জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ৫হাজার ৬শ ৬৫ জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন ৮০ থেকে ৮৫ জন শিশুকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ৩০ জন মেডিকেল অফিসার, ৬জন কনসালটেন্ট ও ৮৮জন নার্স কর্মরত রয়েছে। প্রতিদিন সকালে আউটডোরে ৫জন চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালে বেড রয়েছে ১শটি। এছাড়া ৪০টি বেড রয়েছে দরিদ্র শিশুদের জন্য। যাদের বিনামূল্যে খাবার ও চিকিৎসা হাসপাতালের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়। বর্তমানে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
Leave a Reply