1. ajkerfaridpur2020@gmail.com : Monirul Islam Titu : Monirul Islam Titu
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
  3. titunews@gmail.com : Monirul Islam Titu : Monirul Islam Titu
স্বামীর নির্যাতনে স্ত্রী এখন প্রতিবন্ধী! - আজকের ফরিদপুর
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৩ অপরাহ্ন
নোটিশ বোর্ড :
আজকের ফরিদপুর নিউজ পোর্টালে আপনাদের স্বাগতম । করোনার এই মহামারীকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সচেতনে সুস্থ থাকুন।

স্বামীর নির্যাতনে স্ত্রী এখন প্রতিবন্ধী!

  • Update Time : শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৫২৫ জন পঠিত
স্টাফ রিপোর্টার :
ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ধুলদী গোবিন্দপুর গ্রামের বারেক শেখের মেয়ে সাথী আক্তার (২৩)। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল প্রতিবেশী এক যুবককে। বিয়ের পর ঘর সংসার সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবে চলছিল। কিন্তু যৌতুকের বলি হয়ে এখন তার সবকিছুই উলোটপালোট হয়ে গেছে।
প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানসিকসহ নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন তিনি বাকরুদ্ধ। কেউ কথা বললে কোন সাড়া দেন না। খাওয়া দাওয়া একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। সারাদেহে অসংখ্য নির্যাতনের ভয়াবহতা নিয়ে শুধুই ফেলছেন চোখের জল।
সাথীর পরিবারের দাবি ভয়াবহ নির্যাতনসহ গাছ গাছড়ার ওষুধ খাইয়ে তাকে পাগল বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে নারকীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে তার জীবন যেন সংকটময়। মানসিক ভারসাম্য হারানো মেয়েকে নিয়ে বেশ সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে দরিদ্র ও অসহায় এ পরিবারটি।
গ্রামবাসী, থানা পুলিশ ও গৃহবধুর পরিবার জানায়, প্রায় ৮ বছর আগে ভালোবেসে প্রতিবেশী রাজু আহমেদকে বিয়ে করে সাথী আক্তার। বিয়ের পর বেশ ভালোই চলছিল রাজু-সাথীর সংসার। কিন্তু কয়েক বছর যেতেই স্বামী রাজুর আসল রুপ ধরা পড়ে সাথীর কাছে। যৌতুকলোভী স্বামী টাকা-পয়সার জন্য নানাভাবে নির্যাতন চালায় সাথীর উপর। মেয়ে ভালো চিন্তা করে সাথীর দরিদ্র পিতা-মাতা ধার কর্জ করে দুই লাখ টাকা তুলে দেয় রাজুর হাতে। কিন্তু কিছুদিন পর ফের ৫ লাখ টাকা দাবি করে রাজু। টাকা না দেওয়ায় শারিরিক ও অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন অব্যাহত রাখে রাজু ও তার বাবা-মা। এরই মাঝে সাথীর কোলজুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান।
সেই সন্তানটির বয়স এখন প্রায় ৪ বছর। অবুঝ সন্তানটিকেও কেড়ে নেওয়া হয়েছে মায়ের কাছ থেকে। টাকা দিতে না পারার কারণে সাথীর উপর চলতে থাকে ভয়াবহ নির্যাতন। দেহের বিভিন্ন স্থানে আগুনের ছ্যাকাসহ মারপিটের চিহৃ বয়ে বেড়াচ্ছে অসহায় এ গৃহবধূ। স্পর্শকাতর স্থান গুলোতে সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর সাথীর উপর নির্মম নির্যাতন করা হয়। সেই নির্যাতনের কথা শুনে সাথীর বাবা-মা ছুটে যান জামাই বাড়ীতে। সেখানে গিয়ে সাথীকে মারপিট করা হয়েছে এবং নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পান। পরবর্তীতে জামাই ও তার স্বজনেরা এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে সাথীর বাবা-মাকে আশ্বস্থ করেন।
সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি মারাত্মক আহত অবস্থায় সাথীকে তার মা-বাবাসহ স্থানীয়রা স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে বেশ কয়েকদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সম্প্রতি তাকে বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়েছে। ধারাবাহিক নির্যাতন সইতে না পেরে সাথী এখন মারাত্বক অসুস্থ ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এখন কোন কথাই বলতে পারে না সে। চোখ থেকে শুধু জল ঝড়ছে। খাওয়া দাওয়া একপ্রকার বন্ধ। দরিদ্র পিতা হাসপাতালের চিকিৎসা করাতে না পেরে সাথীকে বাড়ীতে নিয়ে আসে। বর্তমানে বাড়িতেই চলছে সাথীর চিকিৎসা।
সাথীর উপর অমানুষিক নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তার মা নুরজাহান বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার মেয়ের উপর নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবি জানাই।
এ বিষয়ে সাথীর বাবা বারেক শেখ বলেন, আমি একটি তেলের পাম্পে সামান্য বেতনের কর্মচারী। ফলে আমি মেয়ের জামাইয়ের যৌতুকের আবদার মেটাতে পারেনি। যার কারণে তারা আমার মেয়েকে নানাভাবে নির্যাতন করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এদিকে, সাথীর উপর অমানুষিক নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝেও ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, মেয়েটির বাবা-মা দরিদ্র হওয়ার কারণে তারা মেয়েটিকে নিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। স্বামী ও শশুড় বাড়ির লোকজন মেয়েটিকে এমনভাবে নির্যাতন করেছে যা এ সভ্য দেশে কাম্য নয়। এ ছাড়া মেয়েটিকে আজেবাজে গাছ গাছড়া খাইয়ে পাগল বানিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তারা।
অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চৌধুরী বারী বলেন, স্বামী ও শশুড় বাড়ির লোকজন মেয়েটিকে এমনভাবে নির্যাতন করেছে যা এ সভ্য দেশে কাম্য নয়। আমি এই মেয়েটির অমানবিক নির্যাতনের বিচার প্রার্থনা করছি।
সাথীর উপর নির্যাতনের বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠক হলেও স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন শালিস মানেনি বলে অভিযোগ করেছেন সালিসে উপস্থিত থাকা কয়েকজন। উপরন্তু এসব বিষয় নিয়ে কিছু করা হলে হত্যাসহ গ্রাম ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
সাথীর উপর বর্বর নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে তার মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর থেকে সাথীর স্বামী রাজ আহমেদসহ তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে পলাতক রয়েছে। যার কারণে অভিযুক্ত স্বামী রাজু ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অভিযুক্তদের কোন বক্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, সাথীর উপর নির্যাতনের মামলার বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© পদ্মা বাংলা মিডিয়া হাউজের একটি প্রতিষ্ঠান
Design & Developed By JM IT SOLUTION