স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরে আট বছর বয়সী শিশু আবু বক্কারকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে নিহতের চাচাতো ভাই মো. জিন্দার খলিফাকে (২৭) মৃত্যুদন্ড এবং জিন্দারের সহযোগী মাহাবুল শেখকে (৪০)যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেছেন আদালত। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন। মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এই দুই আসামি নগরকান্দার পুরাপাড়া ইউনিয়নের মেহেরদীয়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় দুই আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাদের পুলিশ প্রহরায় জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়ে।
নিহত শিশু আবু বক্কতার খলিফা নগরকান্দার পুরাপাড়া ইউনিয়নের মেহেরদীয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. পাচু খলিফার ছেলে। মৃত্যুপ্রাপ্ত জিন্দার খলিফা শিশুটির চাচাতো ভাই। আদালত সুত্রে জানা গেছে, আদালত জিন্দার খলিফাকে দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে গলায় রশি দ্বারা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। এছাড়া জিন্দার খলিফাকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ এর সাত ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং একই আইনের ৮ ধারায় যাবজ্জীবন করাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমান করা হয়।
আদালত আসামি মাহাবুল শেখকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ এর সাত ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং একই আইনের ৮ ধারায় যাবজ্জীবন করাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমান দেওয়া হয়। এছাড়া দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন করাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারদন্ড দেওয়া হয়। এছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে দন্ডবিধির ২০১ ধারায় তিন বছর করে সশ্রম করাদন্ড প্রদান করা হয়। তবে আদালত জানায় আসামিদের সকল সাজা একত্রে চলবে।
গত ২০১৯ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যায় পুরাপাড়া বাজার থেকে নিখোঁজ হন শিশু বক্কার। ২ জুলাই ও ৮ জুলাই তার ছেলের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে অজ্ঞাত ব্যক্তি পাচুকে ফোন করে জানায়, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপন বাবদ তিন লাখ টাকা দাবি করেন অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি। এ টাকা নিয়ে পাচুকে মাওয়া ঘাটে যেতে বলা হয়। এ ঘটনায় ওই বছর ১০ জুলাই পাচু খলিফা নগরকান্দা থানায় তার ছেলের অপহরণ করার অভিযোগে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ অপহরণ মামলাটি তদন্ত করেন নগরকান্দা থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল গফফার।
তিনি তদন্ত শেষ করে ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জিন্দার ও মাহবুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তাতে বলা হয়, নিহত শিশুটির বাবা পাচু খলিফা এলাকায় আর্থিকভাবে অবস্থাপন্ন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এ কারনে জিন্দার পরিকল্পনা করে আবু বক্কারকে অপহরণ করে চাচা পাচুর কাছ থেকে টাকা আদায় করবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২০১৯ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুরাপাড় বাজারে জিন্দারের সহযোগী ইজি বাইক চালক মাহবুল আবু বক্কারকে একটি পুরি কিনে দেন।
পরে মাহবুল অন্যান্য যাত্রীর সাথে আবু বক্কারকে বাড়ি পৌছে দেওয়ার কথা বলে তার চালিত ইজিবাইকে উঠায়। সব যাত্রী পথে নেমে গেলে বক্কারের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি বাগানে বক্কারকে নিয়ে যায় মাহবুল। পরে পরিকল্পনা মত জিন্দার সেই বাগানে যায়। পরে আবু বক্কারকে শ^াসরোধ করে হত্যা করে মৃতদেহটি পাশে একটি ডোবায় কচুরিপানার নিচে রেখে দেয়া হয়।
এর ১৬ দিন পর ১৭ জুলাই ওই ডোবা থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে নগরকান্দা থানার পুলিশ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌশলী (পিপি) স্বপন কুমার পাল বলেন, টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য একটি শিশুকে অপহরণ ও হত্যা করে জিন্দার ও মাহবুল এক নারকীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছে। সমাজের এ জাতীয় লোমহর্ষক ঘটনা যাতে আগামীতে কেউ করতে করতে সাহসী হবে না।
Leave a Reply