বোয়ালমারী প্রতিনিধি ঃ খুলনা নগরের মহেশ্বরপাশা এলাকার নিখোঁজ হওয়া আলোচিত রহিমা বেগম নামের সেই মহিলাকে অক্ষত অবস্থায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজের ২৯ দিন পর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের (ওয়াহিদাবাদ) কুদ্দুস বিশ্বাসের (৫৫) বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার অভিযানে রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়া করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনার দৌলতপুর থানার উপপরিদর্শক লুৎফুল হায়দারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল বোয়ালমারী থানার পুলিশের সহযোগিতায় এ অভিযান পরিচালনা করেন। সরেজমিনে গিয়ে যানা যায়, নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর (ওয়াহিদাবাদ) গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. কুদ্দুস বিশ্বাসের বাড়ি থেকে শনিবার (২৪.০৯.২২) দিবাগত রাতে জীবিত অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কুদ্দুস বিশ্বাসের মেয়ে জামাই নুর মুহাম্মাদ বলেন, তার শ্বশুর কুদ্দুস বিশ্বাস ২৫-৩০ বছর খুলনার মীরডাক্সগী এলাকায় সোনালী জুট মিলে কাজ করতেন। আর ওই মহিলাদের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার শ্বশুর কুদ্দুস বিশ্বাস ১৫ বছর আগে খুলনা জুট মিলের চাকরী ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। সেই সুবাদে রহিমা বেগম নামের ওই মহিলা তার শ্বশুর বাড়িতে ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে বেড়াতে আসেন। নুর মুহাম্মদ আরও বলেন, আমার শ্বশুর বাড়িতে সে শুধূু একটা ব্যাগ নিয়ে আসে।
রহিমা বেগমের আসার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, পূর্ব পরিচিত এবং তার বাড়িতে থাকার করণে সেই সূত্র ধরে বেড়াতে আসেন। ওই মহিলা যে তার বাড়িে থেকে নিখোঁজ হয়েছে তা আমরা কেউ জানতাম না। রবিবার সকালে বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্যার ভাগিনা জয়নাল জানান, আমার মামা বাড়িতে নিখোঁজ হওয়া ওই মহিলা ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে বেড়াতে আসে। এসময় ওই মহিলা বলেছিলেন আমার ছেলে মেয়ে ও স্থানীয় লোকজন আমাকে মারধর করেছিলেন এবং আমকে অনেক দিন আগে খুলনা থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে ফেলে যায়। পরে সুস্থ হয়ে বাঁচার জন্য আপনাদের বাড়িতে এসেছি। জয়নাল আরও বলেন ওই মহিলার কথা শুনে আমার কেমন যেন সন্দেহ হয়। পরে রহিমা বেগমের নাম দিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবের সার্চ করলে তার নিখোঁজের সংবাদ জানতে পারি। তখন ওই মহিলাকে তার ছবি দেখাই বলি যে এটা আপনার ছবি কিনা; ওই সময় রহিমা বেগম হতভম্ব হয়ে বলেন, আমার ছবির মতই তো লাগতেছে। পওে ইউটিউবে রহিমার নাম দিয়ে সার্চ করলে তার বিষয়ে অন্যান্য আরো চানচল্যকর তথ্য উঠে আসে। সেখান থেকে জানতে পারি তার মেয়ে মারিয়ম মান্নান সংবাদ সম্মেলন করে তার মায়ের সন্ধান চেয়ে বিভিন্ন স্থানে লিপলেট টাঙিয়েছেন।
এ সময় তার মেয়ের ফেসবুক স্ট্যাাটাসে দেওয়া দুইটি মোবাইল নাম্বার (০১৭৭১১০০২০২, ০১৫৫৮৩৪৯৯০৫) যোগাযোগ করলে রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজের স্ত্রী ফোনটি রিসিভ করেন। রহিমা বেগমের বিষয়টি তাদেরকে বললে তারা ওই নাম্বারের আর ফোন দিতে নিষেধ করে। তারপর থেকে আমার সন্ধেহ হলে রহিমা বেগমকে না জানিয়ে তার (রহিমা) বিষয়টি শনিবার দুপুরে স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ডেও ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে জানালে তিনি খুলনা মহানগরের ২ নম্বরের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমই ওই নারী। এ ঘটনায় রহিমা বেগম যে বাড়িতে ৭দিন আত্মগোপনে ছিলেন সেই বাড়ির তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুলনা পুলিশ থানা হেফাজতে নিয়েছেন। তারা হলেন, বাড়ির মালিক কুদ্দুস মোল্যার স্ত্রী হিরা বেগম (৫০), ছেলে আলামিন বিশ্বাস (২৫) ও কুদ্দুস মোল্যার ছোট ভাই আবুল কালামের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৪৫)। তারা এখন খুলনা পুলিশের জিম্মায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। কুদ্দুস বিশ্বাস বর্তমান বোয়ালমারী উপজেলা ডোবরা জনতা জুটমিলের একজন সাধারন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। আজ রবিবার সকালে বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমকে বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের (ওয়াহিদাবাদ) কুদ্দুস বিশ্বাসের বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়।
খুলনা থেকে পুলিশের একটি দল এবং বোয়ালমারী থানা পুলিশ শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে উদ্ধার করে। ওই বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে খুলনা নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে খুলনা পুলিশ। জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিক পাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হোন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। তার সন্তানরা ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ না পেয়ে পরেরদিন রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরী খাতুন দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। সর্বশেষ পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছিলেন। এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার দিকে মরিয়ম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন “আমার মায়ের লাশ পেয়েছি মাত্র” এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোরগোল পড়ে যায়। শুক্রবার ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক নারীর মৃতদেহের পোশাক দেখে তাঁকে নিজের মা দাবি করেছিলেন মরিয়ম মান্নান।
তবে পরেরদিন শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে মরিয়াম জানান, তার মা’র সন্ধান পাওয়া গেছে খুলনার পুলিশ সুপার তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন। শনিবার (২৪.০৯.২২) দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে নিখোঁজের ২৯ দিন পর ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর (ওয়াহিদাবাদ) এলাকা থেকে মরিয়ম বেগমকে উদ্ধার করে হয়েছে। রবিবার সকালে বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোশারফ হোসেন বলেন, খুলনা মহানগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম আমার পূর্বপরিচিত। রহিমা বেগমকে না জানিয়ে আমরা কাউন্সিলর সাইফুলকে সবকিছু খুলে বললে তারা খুব দ্রæত রহিমা বেগমকে নিয়ে যাবেন বলে জানান। রহিমা বেগম যাতে পালিয়ে না যায় সে বিষয়ে আমাদেরকে নজর রাখতে বলেন কাউন্সিলর। তারপর শনিবার (২৪.০৯.২২) রাতে খুলনা ও বোয়ালমারী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রহিমা বেগমকে খুলনা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে কুদ্দুস মোল্যার বাড়ির তিনজন সদস্যকে খুলনা পুলিশ জবানবন্দি নেওয়ার জন্য খুলনা নিয়ে গেছে।
Leave a Reply