চরভদ্রাসন সংবাদদাতা: ফরিদপুরের চরভদ্রাসন ৪নং গাজিরটেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ইয়াক্বু আলীর বিরুদ্ধে সদস্যদের গালিগালাজ ও অনিয়ম করার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৫ এপ্রিল) চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা’র কাছে উক্ত পরিষদের ৯ ইউপি সদস্য মৌখিকভাবে এ অভিযোগ জানান। ভুক্তভোগীরা জানান, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আর্থিকসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ইউনিয়নের ট্রেড লাইসেন্স, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের অর্থ লোপাট ও ভিজিডি কার্ড বিতরনে অনিয়মের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী পরিষদের ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কোনো মিটিং না করে তাঁর নিজ ক্ষমতাবলে সব কাজ ইচ্ছামতো করে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। এছারা তিনি ২০২২-২৩ অর্থবছরে গাজিরটেক ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য জলমহাল থেকে ২৪ লাখ টাকা বরাদ্ধ পেলেও, আদৌতে সে ইউনিয়নে কোন উন্নমূলক কাজ করে নাই। সে নিজের ইচ্ছামতো বিভিন্ন ভাতা ও বরাদ্দ দেন। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগী ইউপি সদস্যরা জানতে চাইলে হুমকি-ধমকি দিয়ে তিনি বলেন, পরিষদে কিছু নেই, তোমাদের আর পরিষদে আসার দরকার নেই।
ওই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বশির মোল্যা(৪৫) বুধবার বিকালে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ প্রতিবেদককে জানান, চেয়ারম্যান, সচিব ও মেম্বার নিশাদ বেগ তিন জন মিলে পরিষদের অর্থ ভাগাভাগি ও লুটপাট করে খায়। তিনি জানান, আমরা বুধবার সকাল ১০ টার দিকে সকল মেম্বারগন গাজিরটেক ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে হোল্ডিং নেমপ্লেটের টাকার হিসাব জানতে চাইলে মেম্বার নিশাদ বেগের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। পরে, ১১ ঘটিকার সময় আমি কানাইরটেক মোড়ে গেলে সেখানে নিশাদ বেগ ও চেয়ারম্যানের হাতুরি ও সন্ত্রাসবাহিনী দিয়ে আমাকে মারধর করে এসময় আমার সাথে থাকা ৯০ হাজার টাকাও নিয়ে যায় তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা।
এঘটনায় আমি চরভদ্রাসন থানায় রিশাদ বেগ(৩৫), মজিবর বেগ(৫২), মুরাদ বেগ(৪০), হাবিব বেগ(৪৫) ও সজিব বেগ(২৭) ৫ জনকে বিবাদী করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। এছাড়া সে একই সাথে গাজিরটেক ইউনিয়নের নটাখোলা একটি উচ্চ বিদ্যালয় হতেও বেতন তোলেন আবার পরিষদেরও বেতন ভোগ করেন। ওই ইউনিয়নের ১,২,৩ ওয়ার্ডের ইউপি নারী সদস্য বিলকিস আক্তার, ৪,৫,৬ ওয়ার্ডের মনোয়ারা পারভীন ও ৭,৮,৯ ওয়ার্ডের সদস্য শারমিন সুলতানা জানান, আমরা কখনও সচিবের কাছে পরিষদের ভিজিডি কার্ড ও বিভিন্ন উন্নমূলক কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে, চেয়ারম্যান পরে একথা শুনে আমাদের সঙ্গে গালিগালাজ ও অসাধাচারন করেন। সে টেবিলে থাপ্পর দিয়ে বলে আমার কোন মেম্বার লাগবেনা। শুধু আমার চেয়ার থাকলেই হবে। তোদের মত মেম্বার আমার লাগবেনা।
তারা এসময় আরও বলেন, আমরা কোন প্রজেক্টের মাল বিতরন করতে গেলে চেয়ারম্যানকে পারসেনটিস ছারাও অতিরিক্ত মাল দিতে হয় আমাদেরকে। শুধু তাই নয়, তাকে ১ লাখ টাকার কাজে ৩২ হাজার টাকা পারসেনটিস দিতে হয় আমাদের। আবার মিটিং হলে কোন কিছু সিন্ধান্ত গ্রহনের পূর্বেই সে আমাদেরকে রেজুলেশন খাতায় সই করতে বলে। ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুর রউফ জানান, সম্প্রতি বরিশালের একটি এনজিও কোম্পানি চেয়ারম্যান ও সচিবের সাথে যোগাযোগ করে গাজিরটেক ইউনিয়নে ৯শ’ বাড়িতে ১৫০ টাকা করে ৭ হাজার হোল্ডিং নেমপ্লেট কার্ড বিতরনে প্রায় ১০ লাখ টাকা ও ট্যাক্স উত্তলোনের ২০ লাখ টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যানের লোকজন পরিষদের মেম্বারদেরকে মারধর করেন।
এ ব্যাপারে গাজিরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইয়াক্বু আলী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলো অস্বীকার করে বলেন, ‘ইউপি সদস্যদের অনেহ্য দাবী দাওয়া মেনে না নেওয়ায় ব্যাক্তি আক্রোশে তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’ চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম রেজা বলেন, ইউপি সদস্যকে মারধরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে এঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এবিষয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা কবির ত্রপা’র সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কোন যোগাযোগ করা যায়নি।
Leave a Reply