নিরঞ্জন মিত্র (নিরু), ফরিদপুর : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর অধীনে ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (সগবি), এর সহযোগিতায় এবং মাদারীপুর আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্র (বারি) এর আয়োজনে, বারি মাস-৩ উৎপাদন কার্যক্রমের উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশাল মাদারীপুর আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ফরিদপুর অঞ্চল ডাল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’’ প্রকল্পের অর্থায়নে, গত (১৩ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের মৌকুরী গ্রামে এ মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (বারি) এর অঞ্চল প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে, মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পাবনা ঈশ্বরদীর ডাল গবেষণা কেন্দ্র ও আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোঃ মহি উদ্দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাদারীপুর আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ ছালেহ উদ্দিন, রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এস.এম সহীদ নূর আকবর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন গাজীপুর ডাল গবেষণা উপ-কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ.কে.এম মাহবুবুল আলম। এসময় সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক সহকারীবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য উপস্থিত ছিলেন। বারি মাস-৩ এর উৎপাদন কার্যক্রমের উপর অনুষ্ঠিত মাঠ দিবসে ৮০ জন কৃষক কিষানী অংশগ্রহন করেন। অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের কৃষিতে ডাল ফসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, দারিদ্র বিমোচন ও পুষ্টিহীনতায় ভোগা বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস। ডাল ফসলে আমিষের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০%। এজন্য ডালকে গরিবের মাংস বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ডাল ফসলের আবাদী জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর যা মোট আবাদি জমির শতকরা ১২ ভাগ এবং উৎপাদিত ডালের পরিমান ১০ লক্ষ মেট্রিক টন। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিদিন একজন মানুষের ৪০-৪৫ গ্রাম ডাল খাওয়া উচিত, সে তুলনায় আমরা ভক্ষণকরি মাত্র ১৭ গ্রাম। অপর্যাপ্ত উৎপাদনের জন্য এদেশের জনগণের মাথাপিছু দৈনিক ডালের প্রাপ্যতা খুবই কম।
কৃষকের ডাল ফসলের উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ডালের অনেক লাগসহ জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। মাসকলাই ছাড়াও কৃষকদের বারি উদ্ভাবিত অন্যান্য ডাল ফসলের নতুন জাত ও প্রযুক্তি দ্বারা ডাল ফসল আবাদের জন্য প্রধান অতিথি অনুরোধ করেন। আমন্ত্রিত অতিথিসহ কৃষকবৃন্দ বারি উদ্ভাবিত বারি মাস-৩ এর মাঠ পরিদর্শণ করেন। কৃষকেরা সাধারণত স্থানীয় জাতের মাস কলা আবাদ করে থাকে, যার ফলন কম এবং রোগ ও পোকামাকড়ের পরিমাণ বেশী। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি মাস-৩ (হেমন্ত) জাতটির ফলন শতকে প্রায় ৬ কেজি যার দ্বারা বারি উদ্ভাবিত এ জাতসমূহ কৃষক পর্যায়ে আবাদ করে দেশে ডালের ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব। তাই, কৃষকেরা প্রচলিত জাতের পরিবর্তে বারি উদ্ভাবিত বারি মাস-৩কে গ্রহন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধান অতিথি সবাইকে নতুন প্রযুক্তি গ্রহন করে মাসকলাইর উৎপাদনকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করেন।
Leave a Reply