1. ajkerfaridpur2020@gmail.com : Monirul Islam Titu : Monirul Islam Titu
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
  3. titunews@gmail.com : Monirul Islam Titu : Monirul Islam Titu
সালথায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠা‌নের মাধ‌্যমে কো‌টিপ‌তি উপ‌জেলা চেয়ারম‌্যান
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন
নোটিশ বোর্ড :
আজকের ফরিদপুর নিউজ পোর্টালে আপনাদের স্বাগতম । করোনার এই মহামারীকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সচেতনে সুস্থ থাকুন।

সালথায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠা‌নের মাধ‌্যমে কো‌টিপ‌তি উপ‌জেলা চেয়ারম‌্যান

  • Update Time : শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২
  • ৯১০ জন পঠিত
সালথায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠা‌নের মাধ‌্যমে কো‌টিপ‌তি উপ‌জেলা চেয়ারম‌্যান
সালথায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠা‌নের মাধ‌্যমে কো‌টিপ‌তি উপ‌জেলা চেয়ারম‌্যান

বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁদাবাজী, দূর্নীতি, নিয়োগবাণিজ্য আর নিজ উপ‌জেলা প‌রিষ‌দে নিজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠা‌নের মাধ‌্যমে কাজ করাই যার নেশা তিনি ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: ওয়াদুদ মাতুব্বর। এসব করে তিনি হয়েছেন অঢেল অ‌বৈধ সম্প‌দের মালিক। ওয়াদুদ মাতুব্বর নিজের এলাকাসহ উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামে দলপক্ষ ও এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অগণিত দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ইন্ধন দিয়েছেন। এমন অভিযোগ স্থানীয়ও ও সংশ্লিষ্টদের। সম্প্রতি তার লোকজনের দ্বারা স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা এলেম শেখ আক্রমনের শিকার হন এবং তার বাড়িঘর ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।

এ মামলাসহ গত ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের সালথায় নজিরবিহীন সহিংসতার ঘটনা ঘটে সালথায়। সে সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারী অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকরী হিসেবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়ে সংশ্লিষ্ট মামলায় চার্জশীটভূক্ত আসামী হ‌য়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর বর্তমানে ফরিদপুরের কারাগারে রয়েছেন।

এছাড়া গত তিন বছরে ওয়াদুদ মাতুব্বর সালথা উপজেলায় সরকার কর্তৃক গৃহীত উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অবৈধ সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ঠিকাদারের নিকট হতে অবৈধ অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মে উৎসাহিত করতেন। এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রী রুমা আক্তা‌রের লাইসেন্স ব্যবহার করে সালথা উপ‌জেলা পরিষদে (২৪ জুন ২০২১ থে‌কে ১০ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত) ছয় মা‌সে প্রায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি ঠিকাদারি কাজ সম্পন্ন ক‌রে টাকা তু‌লে নি‌য়ে‌ছেন।

নিজ প‌দের প্রভাব খাঁটিয়ে ‘উপজেলা পরিষদ আইন’ লঙ্ঘন করে লাখ লাখ টাকার এই উন্নয়ন প্রকল্পের নামমাত্র কাজ করে সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এতে স্থানীয় অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানা যায়, ওয়াদ‌ুদ মাতুব্বর ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেনকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হন মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর।

উপজেলা চেয়ারম্যান হ‌য়ে সালথা উপজেলায় সরকার কর্তৃক গৃহীত উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে তিনি অবৈধভা‌বে নি‌জের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দি‌য়ে নামেমাত্র কাজ ক‌রে টাকা তু‌লে নি‌তেন। অনলাই‌নের মাধ‌্যমে যে টেন্ডারগু‌লো হ‌তো সেই কাজ থে‌কে অ‌বৈধ সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ঠিকাদারের নিকট হতে অবৈধ অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মে উৎসাহিত করতেন।

ওয়াদুদকে চাঁদা না দিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে দেওয়া হতো না। তার কথার বাইরে উপজেলায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ হতো না। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি হাটবাজার থেকে নিতেন চাঁদা। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন তহবিল থেকে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করে তিনি অর্থ তুলে নিতেন সরকারী কর্মকর্তাদের জিম্মি করে। এতো অনিয়ম চললেও তার এমন অ‌বৈধ ক্ষমতার কারণে উপ‌জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তার কাজে গিয়ে কাজের তদারকি করতেও পারেন না। তিনি এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে তার ভয়ে কেউ মুখ খুলার সাহসও পেত না।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, মেসার্স রাতুল এন্টারপ্রাইজ, বা‌লিয়া বাজার, সালথা, ফ‌রিদপুর লাইসেন্সের স্বত্তাধিকারী রুমা আক্তার। তি‌নি সালথা উপ‌জেলা প‌রিষ‌দের চেয়ারম‌্যান মো: ওয়াদুদ মাতুব্ব‌রের স্ত্রী। তি‌নি ৯ লক্ষ টাকা ব‌্যয়ে উপ‌জেলার ২০২১-২২ অর্থ বছ‌রের হাট-বাজার ইজারার আয়ের শতকরা ১০% ও ১৫% টাকা দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার উন্নয়নের প্রকল্পের আওতায় বা‌লিয়া হা‌টের রাস্থা এইচ‌বি‌বি কর‌ণের কাজ ক‌রে‌ছেন।

২০২০-২১ অর্থ বছ‌রের উপ‌জেলা প‌রিষদ উন্নয়ন তহ‌বি‌লের প্রক‌ল্পের মাধ‌্যমে বি‌বিধ রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প দে‌খি‌য়ে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নি‌য়ে‌ছেন। ২০২০-২১ অর্থ বছ‌রের এ‌ডি‌পি ফা‌ন্ডের বরাদ্দ হ‌তে রাতুল এন্টারপ্রাইজ তিন‌টি কা‌জের মাধ‌্যমে ২৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তু‌লে নি‌য়ে‌ছে। এর মধ্যে ৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ব‌্যয়ে উপ‌জেলার কা‌ঠিয়ার গ‌ট্টি গ্রা‌মের সাইফু‌দ্দি‌নের বা‌ড়ির সাম‌নের পুকু‌রের ঘাটলা নির্মাণ, ৬ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা ব‌্যয়ে উপ‌জেলা চেয়ারম‌্যা‌নের বাস ভবন মেরামত ও ৮ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা ব‌্যয়ে সালথা উপ‌জেলা প‌রিষ‌দের পুকুরপা‌ড়ে পাম্প মে‌শিন স্থাপন এবং স্থানীয় এম‌পি জাতীয় সংস‌দের সংসদ উপ‌নেতার বাসভব‌নের সাম‌নে ঘাটলা সংস্কার ক‌রে টাকা তু‌লে নি‌য়ে‌ছেন।

বি‌ধি মোতা‌বেক কোন উপ‌জেলা চেয়ারম‌্যান ও তাহার প‌রিবা‌রের কোন সদস‌্য সং‌শ্লিষ্ট উপ‌জেলায় কার্য সম্পাদনে ঠিকাদার নিযুক্ত হই‌তে পার‌বেন না। আর য‌দি কোন উপ‌জেলা চেয়ারম‌্যান নির্বা‌চিত হওয়ার প‌রে উক্ত উপ‌জেলায় কোন ঠিকাদারী কা‌জে ঠিকাদার নিযুক্ত হন তাহ‌লে বি‌ধি মোতা‌বেক (উপ‌জেলা প‌রিষদ আইনের ৮/২ এর ঝ অংশ মোতা‌বেক তি‌নি পদ হারা‌বেন অথবা বিভাগীয় শা‌স্তি পা‌বেন।মেসার্স রাতুল এন্টারপ্রাইজ তার নিজের কিনা জানতে চাইলে সালথা উপ‌জেলা চেয়ারম্যানের স্ত্রী রুমা আক্তার ব‌লেন, হ্যাঁ এটা আমার ছেলের নামে লাইসেন্স করা। আমি এর সত্ত্বাধিকারী।

এছাড়া আমিই নিজেই এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করি। উপজেলা চেয়ারম্যানের স্ত্রী হয়ে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের নামে লাইসেন্স করে পরিচালনা করতে আইনের কোনো বাঁধা আছে কি-না ; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা আমার জানা নেই। সালথা উপজেলা প্রকৌশলী তৌহিদুর রহমান বলেন, আমি আগে জানতাম না রাতুল এন্টারপ্রাইজ সালথা উপ‌জেলা চেয়ারম‌্যান ওয়াদুদ মাতুব্ব‌রের স্ত্রীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সাংবা‌দিকে‌দের মাধ‌্যমে প‌রে জে‌নে‌ছি।

তি‌নি আরও ব‌লেন, কোন জনপ্রতিনিধি নিজ উপ‌জেলায় নিজ অথবা প‌রিবা‌রের নামীয় ঠিকাদারি ফার্মের লাইসেন্স দিয়ে ঠিকাদারি কাজ করতে পারেন না। এবিষয়ে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যবস্থা নিতে পারেন। এব্যাপারে তৎকালীন সালথা উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হাসিব সরকারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার সময়কালে মেসার্স রাতুল এন্টারপ্রাইজ নামে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে কি-না তা আমার মনে নেই।

তাছাড়া ঠিকাদারি কাজগুলো অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদন হওয়ার কারণে অনেক কিছুই আমাদের জানা থাকেনা। এগুলো সালথা উপজেলা প্রকৌশলী হয়তো বলতে পারবেন। সাবেক এ ইউএনও বলেন, তবে একজন জনপ্রতিনিধির কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বার্থ জড়িত থাকলে আইনের পথে কিছু বাধা রয়েছে। সালথা উপজেলার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা.তাছলিমা আকতারের কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিধি উপেক্ষা করে রাতুল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছেন কিনা এবিষয়ে আমি জানিনা। কেননা প্রকল্পগুলো আমি যোগদানের পূর্বে অনুমোদিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে।

এব্যাপারে বক্তব্য জানতে ফ‌রিদপুর জেলার স্থানীয় সরকার বিভা‌গের উপ-প‌রিচালক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লার মুঠোফোন একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এব্যাপারে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক রায় বলেন, কোনো জনপ্রতিনিধি নিজ নামে কিংবা আত্মীয়-স্বজনের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে কাজ করতে কোনো বাঁধা দেখিনা।

আমরা বড় বড় এমপি মন্ত্রীদেরও-তো দেখি তাদের নিজেদের নামে কিংবা আত্মীয়দের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে কাজ করতে। একজন জনপ্রতিনিধি নিজ নামে কিংবা আত্মীয়দের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে কাজ করতে আইনের কোনো বাধা আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রশাসনের এ কর্মকর্তা বলেন, তা আমি পুরোপুরি না জেনে বলতে পারছিনা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© পদ্মা বাংলা মিডিয়া হাউজের একটি প্রতিষ্ঠান
Design & Developed By JM IT SOLUTION