স্টাফ রিপোর্টার : গত ১৪ বছর ধরে শরীরের ডানপাশ প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়ায় নিজে থেকে চলা ফেলা করতে পারেন না আব্দুল খালেক (৬০)। যেখানে থাকেন সেখানে শুয়ে-বসেই সময় কাটাতে হয় তাকে। ভাই-বোন ও সন্তান থাকলেও কেউ তার খোঁজ নেয়নি। এ অবস্থায় গত গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় খালেককে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের সামনে ফেলে রেখে যান স্বজনরা। সোমবার সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
আব্দুল খালেক সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ভাওয়াল গ্রামের মৃত মজিদ মাতুব্বরের ছেলে। তিনি চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি (খালেক) সবার বড়। আব্দুল খালেকের দুই ছেলে আলমগীর মাতুব্বর (৪০) ও কলম মাতুব্বর (৩৫) বিয়ে করে নিজ নিজ শ^শুরবাড়িতে বসবাস করেন। দুটি বিয়ে করেছেন আব্দুল খালেক। দুই স্ত্রীই মারা গেছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর মারা যাওয়ার পর প্যারালাইসিস হয়ে তার শরীরের ডানদিক পড়ে যায়। এরপর বসতভিটা যা ছিল তা বিক্রি করে চিকিৎসা করেন তিনি। এখন তার সহায় সম্বল বলে কোন সম্পত্তি নেই। আব্দুল খালেক জানান, আমার কোনো খোঁজখবর কেউ রাখে না।
দুই ছেলে বিয়ে করে রাজবাড়ী তাদের শ^শুর বাড়িতে থাকে, আমার কোন খোঁজ নেয় না। ভাই-বোনেরা সবাই আর্থিকভাবে ভাল আছে। তারাও আমার দেখাশোনা করে না। এমন অবস্থায় গত দুই বছর আগে তিনি পাশের আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামে শ^শুর বাড়িতে আশ্রয় নেন। শ^শুর বাড়ির লোকজনও তার দায়িত্ব আর নিতে রাজী না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার তাকে ইউএনও অফিসের সামনে ফেলে রেখে যায়। এ ব্যাপারে রাজবাড়ী তে বসবাসকারী ওই বৃদ্ধের দুই ছেলের মুটোফোন নম্বর না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জোসনা বেগম নামে খালেকের শ^শুর বাড়ির এক নারী বলেন, আব্দুল খালেকের ছেলেদের সাথে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম, তারা কেউ ওনার দায়িত্ব নিতে চায় না। ওনার ভাই-বোন সবার বাড়িতেই বিল্ডিং ও জমিজমা আছে। তারাও তার খোঁজখবর নেয় না। আমাদের পক্ষেও আর তাকে টানা সম্ভব নয়। সোমবার বেলা ১১টার দিকে একটি মাহিন্দ্র গাড়িতে করে শান্তি নিবাস (যা বৃদ্ধাশ্রমে নামে পরিচিত) পাঠিয়ে দেওয়া হয় অসুস্থ খালেককে। সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার অফিসের সামনে একজন বৃদ্ধ লোককে তার স্বজনরা ফেলে রেখে যায়। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, তার ছেলেরা শ^শুর বাড়িতে বসবাস করেন।
তিনি তার বসতবাড়ি বিক্রি করে নি:শ^ হয়ে শ^শুর বাড়িতে থাকতেন। তবে এখন শ^শুর বাড়ির লোকজনও তার ব্যয়ভার নিতে নারাজ। তাই শ^শুর বাড়ির স্বজনরা এখানে ফেলে রেখে গেছেন। পরবর্তী প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের যোগাযোগ করে তাদের যে বৃদ্ধানিবাস আছে, সেখানে তার থাকার ব্যবস্থা করি। সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা এলাকায় সোহরাওয়ার্দ্দী সরোবরের পাশে অবস্থিত। শান্তি নিবাসের কারিগরি প্রশিক্ষক ডলি রানী সাহা বলেন, আজ দুপুর ১২টার দিকে বৃদ্ধ আব্দুল খালেককে আমরা গ্রহণ করি। তিনি নিজে হাটা চলা ফেরা পর্যন্ত করতে পারেন না। বৃদ্ধ বয়সে স্বজনদের উপহাসের পাত্র হয়ে আসা এইসব ব্যক্তিদের মুখের দিকে তাকালে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।