স্টাফ রিপোর্টার : সারা দেশে একযোগে পালিত হচ্ছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর সেই দুর্গাপূজা উপলক্ষে ফরিদপুর জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চলছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। গত (১৪ অক্টোবর) মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভ সূচনা অনুষ্ঠিত হয়। এরপরে ১৯ অক্টোবর দুর্গাদেবীর বোধন, গতকাল ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা যা শেষ হবে আগামী ২৪ অক্টোবর দশমী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গা দেবীর বিসর্জন। এরই অংশ হিসেবে ফরিদপুর সদর উপজেলার ধোপাডাঙ্গা চাদপুরে একটি মন্ডপে দুর্গা পূজার আয়োজন একটু ব্যতিক্রমধর্মী।
ধোপাডাঙ্গার ড. যশোদা জীবন দেবনাথ সিআইপির বাড়ীতে বৃহৎ পরিসরে প্রায় তিন শতাধিক প্রতিমা নিয়ে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পৌরাণিক কাহিনী মহাভারত ও রামায়ণের গল্পকথা অবলম্বনে এখানে সত্য, দ্বাপর, ত্রেতা ও কলি এই চার যুগের দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে ভগবানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরা হয়েছে। বিস্তর পূজা মন্ডপজুড়ে আলাদা আলাদা কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে ৫২ টি খন্ডের মাধ্যমে প্রতিমা সাজিয়ে পূজা উদযাপন করা হচ্ছে। মহাভারত ও রামায়ণের গল্পকথা যেন মৃর্ত হয়ে উঠবে ড. যশোদা জীবন দেবনাথ সিআইপির বাড়ীর দুর্গোৎসবে। এখানে দুর্গা দেবীর প্রতিমাসহ স্থান পেয়েছে প্রায় তিন শতাধিক দেব দেবীর প্রতিমা।
মৃৎশিল্পীরা দুই মাস ধরে রাতদিন পরিশ্রম করে রামায়ণ ও মহা ভারতের কাহিনীকে যেন স্বর্গ থেকে বাস্তবে নামিয়ে এনেছে মর্ত্যের ধরাধামে। ব্যতিক্রমী এই পূজার আয়োজন দেখতে পূজার আগে থেকেই এখনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। প্রতিমা শিল্পী সুজয় কুমার পাল জানান, দুই মাস ধরে কাজ করে রামায়ণ ও মহা ভারতের মূল কাহিনী ফুটিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। উল্লেখযোগ্য হরি চন্দ্র, রাম লক্ষণ, মুচি রুহি দাশের কাহিনীসহ প্রভৃতি কাহিনী নিয়ে এই ৫২ খন্ড তৈরি করা হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে মোট ৩০০ টি প্রতিমা রয়েছে। এটি দেশের কয়েকটি পূজার মধ্যে অন্যতম একটি সেরা পূজা। আশা করছি গত বছর থেকে এবারে সবকিছু মিলিয়ে উন্নত হয়েছে। দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করবে বলে জানান।
পূজা মন্ডপের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ বলেন, আমাদের এখানে তিন শতাধিক প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে দেশের অন্যতম বড় পরিসরে দূর্গা পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আলোকসজ্জায় পূজা মন্ডপটি সুসজ্জিত করা হয়েছে। ফরিদপুর জেলার মধ্যে এটি শ্রেষ্ঠ পূজা। এখানে বিশাল আয়োজনে নুন্যতম ৫০ লক্ষাধিক টাকা ব্যায় ধরা হয়েছে। আমরা আশা করছি এবারের পূজা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসবে। সব কিছু মিলিয়ে এবার আমাদের এই পূজার আয়োজনে কোন কিছুই অপূর্ণ রাখা হয়নি।
ফরিদপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান সাহা বলেন, এবারে জেলার নয়টি উপজেলায় ৮ শত ১৭ টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন ফরিদপুর জেলায় দুর্গাপূজার জন্য সারাদেশের মধ্যে এটি অন্যতম। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজার শেষ করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলার সকল মন্দিরগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ আনসারসহ মোবাইল টিম কাজ করবে। নিরাপত্তা দিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। পূজা মন্ডপ গুলোতে এবার ফরিদপুরের নয়টি উপজেলার প্রায় সাড়ে আট শতাধিক মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
Leave a Reply