স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরের মধুখালীতে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়ের ডিএনএ পরীক্ষা করে নিহত এক কিশোরের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে। এর সুত্র ধরে পুলিশ এ হত্যার সাথে জড়িত দুই ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে এ হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি চাপাতি। ফরিদপুরে এক প্রেস ব্রিফিংএ এ কথা জানান পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান। গত শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষেএ প্রেসব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়।
গত ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে মধুখালী উপজেলার বিলসিংহনাথ এলাকার ছাইভাঙ্গা বিলে জনৈক কল্লোল সরকারের জমি থেকে মানব দেহের খুলি, কোমরের হাড়, হাত ও পায়ের হাড় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে ডিএনএ টেস্ট করে গত ১৩ সেপ্টেম্ববর জানা যায় এ মৃতদেহটি পাশের রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের খর্দ্দ মেগচামী খাসকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আকিদুল মোল্লার ছেলে আল আমিন মোল্লার (১৭)।
পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, মৃতের পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর এ হত্যার সাথে জড়িত খর্দ্দ মেগচামী খাসকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন ওরফে জুমাত (২৫) কে গত শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার দেওয়া সুত্র ধরে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে খর্দ্দ মেগচামী খাসকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. মনির শেখ (২০) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ সুপার জানান, কাসিম মোল্লা ও নিহত আল আমিন মোল্লার বাবা আকিদুল মোল্লা খর্দ্দ মেগচামী খাসকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
কাসিম মোল্লা সুদে টাকা খাটান। তার কাছ থেকে ১০ বছর আগে আকিদুল মোল্লা ১০ হাজার টাকা সুদে নেন। সুদে-আসলে ওই টাকা এক লাখ ২০ হাজার টাকা হয়েছে বলে দাবি করেন কাসিম মোল্লা। তবে আকিদুল মোল্লা এ পর্যন্ত ৩৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু বাকি টাকার জন্য কাসিম মোল্লা আকিদুলকে চাপ দিতে থাকেন। টাকা না পেয়ে তিনি আকিদুল কিংবা তার ছেলের ক্ষতি করে দেবেন বলে হুমকিও দেন। আলি আমিন বালিয়াকান্দিতে একটি মুরগীর খামারে কাজ করতেন। তার সহযোগি ছিল আলমগীর হোসেন ও মো. মনির শেখ।
এর মধ্যে ওই মুরগীর খামারে চুরি হয়। এ চুরির জন্য আল আমিনকে দোষারোপ করা হয় এবং তাকে জরিমানা ধার্য করা হয়। এ অবস্থায় কসিম মোল্লা আল আমিনের দুই সহযোগী আলমগীর ও মনিরের সহায়তায় ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেমস্বর পরিকল্পিত ভাবে আল আমিনকে ছাইভাঙ্গা বিলের ওখানে নিয়ে চাপাতি দিয়ে জাবাই করে হত্যা করে। পরে তার শরীর কেটে টুকরো টুকরো করে একটি বস্তায় ভরে ছাইভাঙ্গা বিলে জনৈক কল্লোল সরকারের পানিবদ্ধ জমিতে ফেলে দেয়।
পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, এটি একটি নৃশংসতম ঘটনা। প্রথমে এ ব্যাপারে রাজবাড়ী আদালতে মামলা হয়। তদন্ত করে রাজবাড়ী সিআইডি। তবে তারা বেশিদূর এগুতে পারেনি। ইতিমধ্যে কাসিম মোল্লা মারা যান। পরে মধুখালীতে থেকে হাড়গোড় উদ্ধারের পর মধুখালী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আব্দুল্লাহ বিন কালাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) তালাত মাহমুদ শাহেনশা, সহকারি পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) শাকিলুজ্জামান, সহকারি পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মিজানুর রহমান, ফরিদপুরের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক তুহিন লস্কর, ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল, মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নিহত আল আমিনের বাবা আকিদুল মোল্লা, এ মামলার বাদূ মধুখালী থানার এসআই মো. আলমগীর হোসেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মোহাম্মদ হান্নান মিয়া। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ হান্নান মিয়া জানান, আজ শনিবার বিকেলে এ হত্যা মামলার দুই আসামি আলমগীর ও মনির ফরিদপুরের পাঁচ নম্বর আমলী আদালতে জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তরুণ কুমার বসাক এর কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply