মনির মোল্যা, সালথা : ফরিদপুরের সালথায় মাঠে মাঠে আমন ধান কেটে ঘরে তোলার মহোৎসব শুরু হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে রোদের আলোয় ঝলমল করছে কৃষকের পাকা ধান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সেই ধান কেটে আটি বেঁধে বাড়ির ওঠানে নিয়ে ফেলছেন। পরে বাড়ির নারীদের সাথে নিয়ে কাটা ধান মাড়াই করছেন। সব মিলিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহাকর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। আগামী আরও ১০ দিন ধান কাটার এই মহোৎসব চলবে বলে কৃষকরা জানান। কৃষকরা বলছেন, এবার পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েন কৃষকরা।
পাটের বেহাল অবস্থা কাটিয়ে ধান আবাদ করে অনেকটাই ফসল তারা। এবার ধানের ভাল ফলন পেয়ে তাদের মুখে ফুটেছে হাঁসির ঝিলিক। তবে অনেক কৃষক দাবি করেছেন, তাদের জমিতে এবার ধানের ফলন ভাল হয়নি। আবারও দাম ভাল পাচ্ছে না। ফলে এবার ধান আবাদের খরচের টাকাও ঘরে তুলতে পারবেন না তারা। উপজেলার চান্দাখোলা গ্রামের কৃষক জকির হোসেন বলেন, এবার ২ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছি। পাটের মতো ধান আবাদেও বৃষ্টি না হওয়ায় পানির সংকট ছিল। সার-ওষুধ ও শ্রমিকের দামও এবার একটু বেশি। তবে আবওয়া ভাল থাকায় ধানের ভাল ফলন পেয়েছি। প্রতিবিঘায় ১২ থেকে ১৫ মণ ধান পেতে পারি।
ইতোমধ্যে পাকা ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছি। আবু মোল্যা নামে আরেক কৃষক বলেন, ঘরে ধান থাকলে কোনো টেনশন করি না। কারণ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। তাই এবার বেশি করে ধান আবাদ করেছি। আমি যে ধান আবাদ করি তাতে আমার পরিবারের সারাবছরের খাবার হয়ে যাবে। তবে রঘুয়ারকান্দী গ্রামের কৃষক আনন্দ কুমার মালো বলেন, এবার আমারসহ অনেকের জমিতেই ধানের ভাল হয়নি। একবিঘা জমিতে ধান আবাদ করতে এবার ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিবিঘায় সর্বোচ্চ ১০ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে।
আর বর্তমানে প্রতিমণ ধান বিক্রি করছি ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা করে। এতে খরচের টাকাও ওঠা কষ্টকর। সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুদর্শন শিকদার বলেন, সালথায় এবার ১২ হাজার ২৯৩ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এতে আমাদের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলন হয়েছে বেশ ভাল। কৃষকরা ধান কাটা নিয়ে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি আরো বলেন, যারা পুরাতন বা খারাপ বীজ বপণ করে ধানের চারা উৎপাদন করেছেন, তাদের জমির ধান খারাপ হয়েছে। তবে এর সংখ্যা বেশি না।
Leave a Reply