স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরের সালথায় পল্টি মুরগির ফার্ম দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাট। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালিয়া গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানান, গোপালিয়া উত্তরপাড়ায় ইয়ার আলী নামে এক ব্যক্তির একটি পল্টি মুরগির ফার্মের ঘর রয়েছে। শনিবার বিকেলে ওই ঘরের পাশে তিনি আরও একটি মুরগির ঘর নির্মাণ করতে গেলে তার চাচাতো ভাই মো. ওমর আলী বাধা দেয়। তবে তারা দুই জন চাচাতো ভাই হলেও গ্রাম্যদল করেন আলাদা। ওমর আলী সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. খায়রুজ্জামান ওরফে বাবু মোল্লার সমর্থক আর ইয়ার আলী উপজেলা যুবলীগ কর্মী সোহেল রানা ফরহাদের সমর্থক। সোনাপুর ইউনিয়নের গত ইউপি নির্বাচনে মো. খায়রুজ্জামানের বিপরিতে নির্বাচন করে পরাজিত হন সোহেল রানা।
গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খায়রুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়ার ঈগল প্রতীকে এবং সোহেল রানা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরীর পক্ষে নৌকা মার্কার নির্বাচন করেন। মুরগির ঘর নির্মানকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জেরে উভয় পক্ষের কয়েক শত লোক লাঠি, ঢাল, কাতরা, বল্লভ, রামদা, ছ্যানদা, টেটা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গোপালিয়া মাঠের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় সোহেল রানা ফরহাদের সমর্থকদের কয়েকটি বাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
আহতদের মধ্যে তিনজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার সকালে পুলিশ বাদী হয়ে একটি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পোল্টি মালিকের পক্ষে একটিসহ মোট দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে সালথা থানায়। পোল্টিফর্মের মালিকের পক্ষে গোপালীয়া গ্রামের উত্তর পাড়া মহল্লার বাসিন্দা ইয়াছিন আলী শেখের স্ত্রী ফাজোরা বেগম (৪৯) বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ২০-৩০জনকে আসামি করা হয়।
এজাহারে বাড়ি ও মুদির দোকানে হামলা ভাংচুর ও পোল্টি ফার্মে ভাংচুর ও লুটপাট করে মোট ৮ লাখা টাকা ক্ষতি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পুলিশের পক্ষে দায়ের করা মামলায় বাদী হয়েছেন সালথা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবিরুল হক। এজাহারে ২৯ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারি কর্চারিদের কর্তব্যকাজে বাধা ও মারপিট করে সাধারণ ও গুরতর জখম ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শর্টগানের ১০ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওসি মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান আরও বলেন, এ ঘটনায় আটক হওয়া ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রবিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply