1. ajkerfaridpur2020@gmail.com : Monirul Islam Titu : Monirul Islam Titu
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
  3. titunews@gmail.com : Monirul Islam Titu : Monirul Islam Titu
ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে এক বছরে ১৩৫টি দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত - আজকের ফরিদপুর
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ১০:০৮ অপরাহ্ন
নোটিশ বোর্ড :
আজকের ফরিদপুর নিউজ পোর্টালে আপনাদের স্বাগতম । করোনার এই মহামারীকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সচেতনে সুস্থ থাকুন।

ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে এক বছরে ১৩৫টি দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত

  • Update Time : রবিবার, ১০ মার্চ, ২০২৪
  • ৪৫৫ জন পঠিত
ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে এক বছরে ১৩৫টি দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত
ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে এক বছরে ১৩৫টি দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার : ২০২৩ সালের ২৪ জুন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ের ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম উড়াল সেতুর উপর একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর নিউ জার্সি বেরিয়ারে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায়। এতে চালক এবং অ্যাম্বুলেন্সে থাকা একটি পরিবারের সাতযাত্রীসহ আটজন নিহত হন। এ ঘটনায় ওইদিন ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ফরিদপুরের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিপুল চন্দ্র দাসকে।

অপর পাঁচ সদস্য হলেন, সহকারি পুলিশ সুপার হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিওন মো. মারুফ হোসেন, সহকারি পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সড়ক ও জনপথ বিভাগ অনুজ কুমার দে, সহকারি পরিচালক বিআরটিএ মো. এমরান থান ও সহকারি পরিচালক ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। দুইদিন পর ২৬ জুন গঠিত ওই কমিটি প্রতিবেদন দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয় মালিগ্রাম উড়াল সেতুর অন্তত ১৫০ গজ দূরে অ্যাম্বুলেন্সের চালক দ্রæত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাম চাকা নিউ জার্সি বেরিয়ারের উপর উঠে যায়। ফলে আরও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি রোডের মাঝে এসে পুনরায় অ্যাম্বুলেন্স রোডের ডান পাশে ডবিøউ বীম ব্যারিয়ারের ঘর্ষণ লেগে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ফলে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি মালিগ্রাম উড়াল সেতুর নিউ জার্সি ব্যারিয়ারের সাথে অ্যাম্বুলেন্সের সামনের দিকের ডান অংশে সজোরে সংঘর্ষ হয়ে পশ্চিমুখী অ্যাম্বুলেন্সটি ইউটার্ণ করে উত্তর-পূর্বমুখী হয়ে যায় এবং মালিগ্রাম উড়াল সেতুর নিউ জর্সি ব্যারিয়ারের সাথে আঘাত লাগার সাথে দাউ দাউ করে সম্পূর্ণ অ্যাম্বুলেন্সটিতে ভয়াবহ আগুন লেগে যায়। অ্যাম্বুলেন্সটিতে আগুন লাগার জন্য দুটি কারণ চিহ্নিত করে ওই তদন্ত কমিটি।

১। মালিগ্রাম ব্রীজের নিউ জার্সি ব্যারিয়ারের সাথে এ্যাম্বুলেন্সটির সামনের ডান অংশের সজোরে আঘাত লাগার ফলে সামনের অংশে থাকা ইঞ্জিনের স্টোরেজ ব্যাটারিতে স্পার্ক করে আগুন লাগতে পারে।
২। মালিগ্রাম ব্রীজের ১৫০ গজ দূর থেকে এ্যাম্বুলেন্সটির সামনের ডান ঢাকা লিক হয়ে চলে এসে সর্বশেষ যখন ব্রীজের নিউ জার্সি ব্যারিয়ারে আঘাত হানে তখন সে আঘাতে ঘর্ষণের ফলে স্পার্ক করে এ্যাম্বুলেন্সটিতে আগুন ধরতে পারে।
এর ফলে এ্যাম্বুলেন্সে থাকা সামনের ইঞ্জিনের স্টোরেজ ব্যাটারির সালফিউরিক এসিডের কারনে দ্রæত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া সজোরে ধাক্কার ফলে এ্যাম্বুলেন্সে থাকা দুইটি গ্যাস সিলিন্ডারের কানেক্টিং লাইনের পাইপ লিক হয়ে গেলে আগুন দ্রæত ও ভয়াবহ রূপ ধারন করে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট পর্যন্ত আগুন স্থায়ী হয়েছিল।

এছাড়া এ্যাম্বুলেন্সের একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের পাইপও লিক হওয়ার কারণে আগুন দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে। তবে তদন্তকালে এ্যাম্বুলেন্সে থাকা ০২টি গ্যাস সিলিন্ডার ও অক্সিজেন সিলিন্ডারে বিস্ফোরনের কোন আলামত পাওয়া যায় নি। শুধুমাত্র গ্যাস সিলিন্ডারের কানেক্টিং পাইপ বিচ্ছিন্ন হওয়া ছিল মর্মে দেখা যায়। এরপরও থেমে নেই এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনা দ্রæত গতি ও ওভারটেক করার প্রতিযোগিতা, যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী উঠানো, রিক্সা ভ্যানের অবাধ চলাচল, উল্টোপথে মোটরসাইকেল চলাচল এবং সর্বপরি উড়াল সেতু বাদ দিয়ে পথচারীদের সড়ক পারাপার দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি এক্সপ্রেসওয়ে।

পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা খুব একটা দৃশ্যমান দেখা যায়নি। বড় কোন দুর্ঘটনার পর গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। সে কমিটি করে সুপারিশ। তবে সেই সুপারিশগুলি মূলত কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে, বাস্তবায়ন ঘটতে দেখা যায় না। গত (সোমবার (৪ মার্চ) ফরিদপুরের ভাঙ্গার চৌরাস্তা, বগাইল টোলপ্লাজা, হাশামদিয়া, মালিগ্রাম, বামনকান্দা, পুলিয়া এলাকাসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কটির (এক্সপ্রেসওয়ে) অন্তত ২০ কিলোমিটার অংশ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। নিয়ম না মানার কারনে প্রতিনিয়ত ঘটছে এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। কখনও কখনও ভয়াবহ দুর্ঘটনাও ঘটছে।

গত বছর ১৯ জানুয়ারি মাসের শিবচরের নাওডোবা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস দ্রæতগতির কারনে সড়কের রেলিং ভেঙ্গে নিচে পড়ে গেলে মারা যান ১৯ জন। গত জুনে একটি অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় চালকসহ একই পরিবারের একাধিক সদস্যসহ মারা যান ৮ জন। সর্বশেষ গত ৪ মার্চ শিবচরের বড় কেশবপুর এলাকায় ঢাকাগামী একটি একটি মোটরসাইকেলকে পিছনের দিক থেকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলটি সড়কের বিভাজনে সজোড়ে আঘাত খেয়ে তাতে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী ফরিদপুরের সালথার জগিকান্দা এলাকার শহীদ সরদার (৩৫)। এক বছরে মৃত্যু ও দুর্ঘটনার খতিয়ান দেশের একমাত্র এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

২০২৩ সালের মার্চ থেকে চলতি ২০২৪ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে এ মহা সড়কে দুর্ঘটনা হয়েছে ১৩৫টি। এ দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত এবং ১৭২ জন আহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনার জন্য এই এক্সপ্রেসওয়ের অধিনে মাদারীপুর ও গাজীপুর রিজয়নভুক্ত থানায় মামলা হয়েছে ৯৪টি এবং সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে ৪১টি। যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেলের অনিয়মতান্ত্রিক চলাচলে এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে বিআরটিএ। আর পুলিশ জোর দিচ্ছে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ওপর। সঙ্গে হাইওয়ে থানাগুলোতে জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ সুযোগ–সুবিধা বাড়ানোর তাগিদও দিয়েছে তারা।

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার এবং জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার। মাদারীপুর হাইওয়ে পুলিশ ও গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের হিসাব বলছে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে এক্সপ্রেসওয়েতে ১৩৫টি দুর্ঘটনায় ১৩১জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া অংশে ৭২টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬৪ জন। আর জাজিরা-ভাঙ্গা অংশে ৪৯টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬৪ জন। আহত হয়েছে ৭৮জন, মামলা হয়েছে ৫৭টি এবং জিডি হয়েছে ১৫টি। জাজিরা ভাঙ্গা অংশে ৬৩টি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত এবং ৯৪ জন আহত হয়েছে। মামলা হয়েছে ৫৭টি জিডি হয়েছে ১৫টি।

সরেজমিন

গত (সোমবার (৪ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ফরিদপুরের ভাঙ্গার চৌরাস্তা, বগাইল টোলপ্লাজা, হাশামদিয়া, মালিগ্রাম, বামনকান্দা, পুলিয়া এলাকাসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কটির (এক্সপ্রেসওয়ে) অন্তত ২০ কিলোমিটার অংশ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এ মহাসড়কে নিয়ম নীতি মানার কোন বালাই নেই। মহাসড়কের গাড়ি থামানোর জন্য নির্ধারিত জায়গা আছে। সেখানে গাড়ি না থামিয়ে মহা সড়কের একটি অংশে মাঝামাঝি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রী নামানো ও উঠানো হচ্ছে।

এ অবস্থা দেখা গেছে ওই মহা সড়কের বগাইল, মালিগ্রাম, পুলিয়াসহ মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায়। পাশে ছোট ছোট টোল করা হয়েছে। এ টোলে কলার ম্যানরা কিছু টাকার বিনিময়ে যাত্রীদের উঠিয়ে দিচ্ছে দূরপাল্লার বাসে। সরেজমিনে দেখা গেছে ইলিশ, স্বাধীন এক্সপ্রেস, বসুমতি নামের প্রভৃতি রোকার বাসের ক্ষেত্রে এভাবে সড়কের মাঝে রেখে যাত্রী উঠানো নামানো হচ্ছে। পুলিয়ার কলাল ম্যান মো. এমদাদ হোসেন (৩৫) বলেন, আমরা এক বড় ভায়ের হয়ে কাজ করি। ওই বড় ভাই আওয়ামী লীগ করেন দাবি করলেও বড় ভায়ের নাম তিনি প্রকাশ করেননি। সরেজমিনে দেখা গেছে ওই মহা সড়কে অবাধে রিক্সা ভ্যান চলাচল করছে। যা চলাচল করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মোটরসাইকেলগুলিকে দেখা গেলে উল্টোপথে যাতায়ত করতে।

পথচারিদের পারাপারের জন্য গুরুত্বপূর্ন প্রতিটি জায়গায় রয়েছে উড়াল সেতু। কিন্তু কোন পথচারীকে সে সেতু ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। সবাই জীবনের ঝুকি নিয়ে মহাসড়কটি হেটে কিংবা দৌড়ে পাড় হতে দেখা যায়। এ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা হলেন পথচারী। অবশ্য গাড়ি চাপায় মৃত্যুর ঘটনা এ ঘটনা দিনের থেকে রাতেই বেশি ঘটে থাকে। সাড়ে তিনঘন্টা সরেজমিনে পরিদর্শনকালে মহা সড়কের হাশামদিয়া এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ দেখা গেছে। সড়কের একপাশে একটি মাইক্রো থামিয়ে তাদের চালকের সাথে কথা বলতে দেখা গেছে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও বাস্তবায়নের হাল

এক্সপ্রেস ওয়েতে বড় কোন দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। কমিটি কিছু সুপারিশও করে। কিন্তু সে সুপারিশ বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না। বড় দুর্ঘটনার পর কয়েকদিন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি কিছুটা সতর্ক হয় কিন্তু সময় যাওয়ার কিছুদিন পর তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় নতুন করে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটা পর্যন্ত। গত ২০২৩ সালের ২৪ জুন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ের মালিগ্রাম সেতুর উপরে অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় শিশুসহ ৮জন নিহত হয়। এ ঘটনায় ফরিদপুরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি ওই বছর ২৬ জুন তদন্ত প্রতিবেদন দেয়।ওই প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা রোধে ছয়টি সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশগুলি হল

হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্প্রীড কন্ট্রোল ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা,
মহা সড়কে চলাচলকারী প্রত্যেকটি পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশের মনিটরিং টিম আরও কঠোর নজরদারি করা,
মহা সড়কে চলাচলকারী গাড়ীর ফিটনেস ছাড়া গাড়ী চলাচল না করার বিষয়ে তদারকি জোরদার করা, এক্সপ্রেসওয়েতে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চালানো নিশ্চিত করা,
এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা পরিমাপকারি যন্ত্রের মাধ্যমে নির্ধারিত গতিসীমার উর্ধে গাড়ি চলাচলকারী চালকদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া
এবং বিআরটিএ কর্তৃক সারাদেশে সকল যানবাহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নেওয়া।

ওই সুপারিশের পর অতিবাহিত হয়ে গেছে আট মাস। এ আট মাসে সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠানকে যে সব দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছিল তার কতটুকু বাস্থবায়নি হয়েছে। জানতে চাইলে ফরিদপুর বিআরটিএর সহকারি পরিচালক মো. এমরান খান বলেন, ওই সুপারিশ অনুযায়ী বিআরটিএ কর্তৃক সারাদেশে সকল যানবাহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানোর যে সুপারিশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। এটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, কোন গাড়ির ফিটনেস শেষ হয়ে যাওয়ার ১৫দিন আগে অনলাইনে এ বিষয়টি গাড়ির মালিককে জানাই। এ ব্যাপারে যথেষ্ট সাড়া আমরা পচ্ছি। এতে গাড়ির মালিকগণ সতর্ক হয়ে যান কেননা অনেক মালিকের জানা থাকে না তার গাড়ির ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।

একই বিষয়ে মাদারীপুর হাইওয়ে রিজয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহীনূর আলম খান বলেন, ওই সুপারিশ অনুযায়ী হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্প্রীড কন্ট্রোল ক্যামেরা বসানোর সুপারিশটি আমরা কার্যকর করতে পারিনি। এ জাতীয় একটি পাইলট প্রকল্প চট্টগ্রাম হাইওয়েতে চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্পের সাফল্যর ভিত্তিতে পরবর্তিতে এ হাইওয়েতে কার্যকর করা হবে। তবে আমরা গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা স্প্রীড গান ব্যবহার করছি। তারপরও বলতে পারি সব কিছু তরারকি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তিনি বলেন, সড়কে গাড়ির ফিটনেস প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করা হয়। ফিটনেস বিহিন গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহিন চালককে প্রতিনিয়ত জরিমানা করা হচ্ছে। এ ভাবে আমাদের তদারকি কাজ পরিচালিত হচ্ছে।

মাদারীপুর হাইওয়ে রিজয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহীনূর আলম খান বলেন, গত বছর জানুয়ারি থেকে চলতি বছর ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ১৪ মাসে ওই মহা সড়কের জাজিরা ভাঙ্গা অংশে ফিটনেস বিহীন বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৪৯৩টি মামরা করে ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে এত দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক মো. সামছুল হক বলেন, দ্রæতগতির অবকাঠামো হলো। কিন্তু তার সঙ্গে দক্ষ ও যোগ্য চালক না হলে, গাড়ির ফিটনেস ঠিকঠাক না থাকলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সড়কসংকেত না মানলে এক্সপ্রেসওয়েতে বিপর্যয় ঘটবে।

বিপর্যয়রোধে করণীয় সম্পর্কে সামছুল হক বলেন, চালকের যোগ্যতা যাচাই করতে হবে এবং ফিটনেস দেওয়ার আগে গাড়িটা ঠিকঠাক যাচাই করা জরুরি. হাইওয়েতে দুর্ঘটনারোধে মূল কাজ হাইওয়ে পুলিশের উল্লেখ করে ফরিদপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. ইমরান খান বলেন, পুলিশের নজরদারি বাড়ালে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। মোটরসাইকেলের জন্য দুর্ঘটনা বাড়ছে। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলতে দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছেন হাইওয়ে মাদারীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম। পাশাপাশি হাইওয়ে থানাগুলোতে জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

সবার সম্মিলিত চেষ্টা ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয় বলে মত দেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। কোনো গাড়ি যখন দুর্ঘটনায় পড়ে, তখন বিআরটিএ কিংবা হাইওয়ে পুলিশ নিজেদের দোষ ঢাকতে ‘দ্রæত গতির’ কথা বলে দায় তাঁদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের জাকির। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণের ২১টি জেলায় যে সংখ্যক গাড়ি চলাচল করছে, তার ৯৫ ভাগের রুট পারমিট নেই। ওই গাড়িগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ‘ম্যানেজ’ করে অবৈধভাবে চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় প্রায় নিয়মিত যাতায়াত করেন ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুর মহল্লার শাহীন আহমেদ। তিনি বলেন, সবাই গতির সঙ্গে থাকতে চায়, কেউ পিছিয়ে পড়তে চান না। কোনো গাড়ি ওভারটেক করলে যাত্রীরা হইচই জুড়ে দেন। চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘ড্রাইভার কী গাড়ি চালায়!’ আবার দ্রæত চালালে বলে ‘মাতালের মতো গাড়ি চালাচ্ছেন কেন?’ সব মিলিয়ে একটি ভজকট অবস্থার সৃষ্টি হয়। যে কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

বিআরটিএ ও পুলিশ দুই পক্ষেরই নজরদারি জরুরি উল্লেখ করেন ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং মোটরসাইকেল চলার জন্য দুর্ঘটনা বাড়ছে। পরিবহনমালিকেরা লাইসেন্সবিহীন চালকদের বেশি পছন্দ করেন। কারণ, তাঁদের জন্য জরিমানা কম দিতে হয়। পাশাপাশি আট ঘণ্টার জায়গায় দিনে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত গাড়ি চালাতে বাধ্য করা হয় তাঁদের। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে পর্যবেক্ষণ, জরিমানার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

এক্সপ্রেসওয়েটির দেখভালের দায়িত্ব মুন্সিগঞ্জ সড়ক বিভাগের। মুন্সিগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিন রেজা বলেন, অতিরিক্ত গতির পাশাপাশি টায়ারের টেম্পার না থাকায় টায়ার ফেটে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ পথে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু গাড়িগুলো চলছে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে। এ অবস্থায় চাকা ফেটে যাওয়া কিংবা কোনো আঘাতের কারণে ব্রেক চেপে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। নাহিন রেজা আরও বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা-মাওয়া অংশে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। পরে জাজিরা-ভাঙ্গা অংশে কাজ শুরু হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো সম্পূর্ণ হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© পদ্মা বাংলা মিডিয়া হাউজের একটি প্রতিষ্ঠান
Design & Developed By JM IT SOLUTION