মোঃ সরোয়ার হোসেন, ভাঙ্গা: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ‘আজিমনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়’টিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ কতিপয় দূর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্বে সহকারী শিক্ষকসহ ৫ কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ছায়া হিসেবে ব্যাবহার করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতে গোপন নিয়োগের যাবতীয় ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়। এতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে তাদের স্বাক্ষর জাল করে চলে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া। এ গোপন প্রক্রিয়ায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা স্থানান্তর করে দক্ষ প্রার্থীকে প্রতিয়োগিতা থেকে দূরে রেখে গত বুধবার জেলা শহরের একটি বিদ্যালয়ে রাতের আধারে চলে পরীক্ষার নামে এ নাটকীয়তা।
এর আগে একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টার ফলে নিয়োগ বন্ধ করার জন্য ভাঙ্গা সহকারী জজ আদালতে ম্যানেজিং কমিটির এক মহিলা সদস্য মামলা করেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে গোপনে বিদ্যালয়ে শিক্ষকসহ ৫ জন কর্মচারী নিয়োগের খবরে এলাকায়,সংশ্লিষ্ট কর্মকর্র্তা,ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ওই নিয়োগ বাতিল, নিয়োগ পরীক্ষা স্থানান্তর করাসহ আবেদনকারী প্রার্থীসহ নিয়োগ কমিটির সদস্যরা নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ করার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার,শিক্ষা অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন । এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে কমিটির অভিভাবক সদস্য,শিক্ষক প্রতিনিধি,মহিলা শিক্ষক সহ সংশ্লিষ্টরা নিয়োগ বানিজ্য বন্ধের জন্য আবেদন করেছেন।
জানা গেছে,এ বছর ২৩ মার্চ ওই বিদ্যালয়ে ১ জন সহকারী শিক্ষক,আয়া,নৈশ প্রহরী,পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও অফিস সহায়ক পদে অনেকটা চুপিসারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে প্রায় অর্ধ-শতাধিক চাকুরী প্রার্থী আবেদন করেন । কিন্ত বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোশারেফ হোসেন তার পছন্দের প্রার্থীদের নিকট থেকে প্রায় ১৫/১৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কোন প্রকার অবহিত না করে তাদের স্বাক্ষর জাল করে নিজেকে কোন বিশেষ কর্মকর্তার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিয়োগ দেওয়ার অপচেষ্টা চালান। এজন্য তিনি তার পছন্দের কতিপয় নিয়োগপ্রার্থীর নিকট থেকে বিপুল পরিমান অর্থ গ্রহন করেন। এ ঘটনা অন্যান্য প্রার্থী ও নিয়োগ কমিটির সদস্যদের মাঝে জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের মহিলা সোনিয়া বেগম ভাঙ্গা সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়। এর পরেও নিয়োগ প্রক্রিয়া যে কোন উপায়ে প্রদান করার জন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত হন।
গত বুধবার ওই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোশারেফ হোসেন আদালতের চলমান মামলা উপেক্ষা করে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ জামসেদের যোগসাজসে পূনরায় নিয়োগ সংশ্লিষ্টদের না জানিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা না নিয়ে রাতে ফরিদপুর জেলা শহরের একটি বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকত্র্ াসৈয়দ আহমেদ জামসেদ,নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান, ডিজির প্রতিনিধি ফরিদপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপÍ প্রধান শিক্ষক চন্দ্র শেখর দাস,জনৈক এক জনপ্রতিনিধি ও পছন্দের ৫ প্রার্থী ও ১৬ জন সাজানো ছায়া প্রার্থী। দিনভর মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায় থেকে এক পর্যায়ে রাতে কোন রকম প্রক্রিয়া সমস্পন্ন করতে পরীক্ষা গ্রহন করা হয়।
বিষয়টি অন্যান্য প্রার্থী ও নিয়োগ কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছড়িযে পড়লে তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নজরে আনলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ওই স্থানে হানা দেয় বেরসিক পুলিশ। অবস্থা বেগতিক দেখে পছন্দের প্রার্ধী ও সংশ্লিষ্টতা ওই স্থান থেকে সটকে পড়ে। পরে নিয়োগ পরীক্ষার সিট,কাগজপত্র জব্দ করে নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়ার শর্তে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট গচ্ছিত রাখা হয়। ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দেখা দেয় ব্যাপক উত্তেজনা। এ সত্যেও সক্রিয় চক্রটি অর্থের বিনিময়ে এলাকার রাঘববোয়ালদের ম্যানেজ করে পূনরায় নিয়োগ দানের প্রক্রিয়া।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য বাচ্চু খলিফা,লিটু হাওলাদার, সোনিয়া বেগম,দাতা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্বা আঃ ছালাম মিয়া, শিক্ষক প্রতিনিধি জিয়াসমিন সুলতানা,কো-অপ্ট সদস্য সহ অন্যান্য সদস্যরা জানান তাদের স্বাক্ষর জাল করে মিটিং ফোরাম তৈরী করে সভাপতি মোশারেফ হোসেন,মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ জামসেদের সহযোগিতায় প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে স্থানাস্তর করে এ নিয়োগ প্রদানের অপচেষ্টা করেন্। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি হেমায়েত হোসেন মিলন বলেন, বর্তমান সভাপতি মোশারেফ মাতুব্বর প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিতে শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে তিনি একাই পছন্দের অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। আমরা অবিলম্বে এর প্রতিকার চাই। বীর মুক্তিযোদ্বা সালাম মিয়া বলেন,অবৈধ নিয়োগ দান প্রক্রিয়া বন্ধ না করলে এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ে ওই দিনের নিয়োগের ব্যাপারে আমার কোন ধারনা নেই। আমাকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোশারেফ মাতুব্বর বিদ্যালয় স্বার্থ সংশ্ষ্টি বিষয় নিয়ে ফরিদপুর যেতে বললে ওই স্থানে গিয়ে দেখি শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পরে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হলে সিট ও আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র আমার জিম্মায় থাকে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ জামসেদের নিকট জানতে চাইলে তিনি নিয়োগের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির চাহিদা মোতাবেগ ফরিদপুরে পরীক্ষা গ্রহনের সিদ্বান্ত হয় বলে জানান তিনি।
তার এ বিষয়ে কোন ভ’মিকা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,নিয়মের বাইরে কেউ নয়। বিষয়টির ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন বলেন, যেহেতু এটি আদালতে গড়িয়েছে, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগদানের কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি শুনেছি, বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোশারেফ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নিয়োগ পদ্বতি মেনেই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া চেষ্টা করা হয়েছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন আমাদের নিকট থেকে নিয়োগের নামে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিযেছেন। আমাদের টাকা-পয়সা ফেরত না দিয়ে অন্য পছন্দের প্রার্থীদের নিকট থেকে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদিকে চক্রটি অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্বে অবিলম্বে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের প্রতি দাবী জানিয়েছেন।
Leave a Reply