স্টাফ রিপোর্টার : কোন কাজ না করা, রাজনীতির পিছনে ঘুরে বেড়ানো ও নেশা করা থেকে শুরু হয় পারিবারিক দ্ব›দ্ব। পাশাপাশি মায়ের মৃত্যুর পর বাবার দ্বিতীয় বিয়ে মন থেকে মেনে নিতে পারে নি যুবলীগ কর্মী তুষার প্রামাণিক (৩০)। এর ফলেই ঘটে এ অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। তুষার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের চরবর্ণী গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ প্রামাণিক-সেলিনা বেগম দম্পতির ছেলে। দুই বোন ও এক ভায়ের মধ্যে তিনি ছোট। ২০০৮ সালে তুষার যখন অস্টম শ্রেণির ছাত্র ওই বছর সে তার খালাতো বোন সমবয়সী নীপাকে বিয়ে করেন।
বাল্য বিবাহ করার জন্য দুইজনকেই কারাবাস করতে হয় এক মাস করে। তুষার এক ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা। তার ছেলে ঢাকায় নানার কাছে থাকে। ২০১৭ সালে হৃদরোগজনিত কারনে মারা যান তুষারের মা সেলিনা বেগম। এর পর তুষারের বাবা বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর কর্মচারি ফরিদ প্রামাণিক সাফিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। এ বিয়ে ভালো ভাবে মেনে নেয়নি তুষার। তিনি ওই বছরই ঢাকা চলে যান এবং গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দুই বছর পর বাবা তাকে বুঝিয়ে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসে জমি ও গাভী পালনের দায়িত্ব দেন।
এরপর বাবা বোয়ালমারী সদরে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করা শুরু করেন। তুষারের বাবা ফরিদ প্রামাণিক জানান, গত দেড় মাস ধরে তুষারের সাথে তার স্ত্রীর পারিবারিক কলহ শুরু হয়। দুজনের সমস্যা যে অনেক গভীর তা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু সংকটের মূল কারণটি ধরতে পারিনি। তুষার আমাকে বলতো, ‘আমি খুব মানষিক কষ্টের মধ্যে আছি’। কিন্তু কি সেই কষ্ট তা আমাকে বলেনি। তিনি বলেন, গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। দিনভর পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে নীপা তার মুঠোফোন আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে।
পরে আমি ও নীপার মামা মিলন মৃধা যুক্তি করে নীপাকে দুই মেয়েসহ মিলন মৃধার বাড়িতে নিয়ে যাই ওই দিন সন্ধ্যার দিকে। ওইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে ঘরের নিজ কক্ষের আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় তুষারকে দেখে তার ছোট চাচী আমাকে ফোন করেন। মিলন মৃধা বলেন, তুষার কোন কাজ করতো না। রাজনীতি নিয়ে ব্যাস্ত থাকতো। মোটরসাইকেল নিয়ে নেতাদের পিছনে ঘুরে বেড়াত। শুনেছি আজে বাজে ছেলেদের সাথেও সে ওঠা বসা করতো। নেশা করতো এ কথাও শুনেছি।
তিনি বলেন আমি ও তুষারের বাবা ভেবেছিলাম স্বামী স্ত্রীকে কিছুদিন আলাদা রাখলে তাদের মধ্যে বিরোধ কমে যাবে। সেজন্যই নীপাকে উপজেলার চতুল আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। রাতে আমি তুষারের মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে আসি। বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক উত্তম কুমার সেন জানান, খবর পেয়ে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার ময়না তদন্ত শেষে মৃতদেহটি বিকেলে তুষারের বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে তুষারের বাবা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তি আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply