স্টাফ রিপোর্টার : ভোট গ্রহণের এক দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী মো. ওয়াহিদুজ্জামান। এ ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনের এমপি শাহদাব আকবর লাবুর প্রভাবের কারণে এ নির্বাচন থেকে আমার সরে দাঁড়ানো অন্যতম কারণ। দ্বিতীয় কারন হলো সংঘাত এড়ানো। আমি এমপির সাথে বিরোধে জড়াতে চাই না। তৃতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় সালথা উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী মঙ্গলবার ২১ মে। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে ভোট গ্রহণ করা হবে।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের মরহুম সংবাদিক শামসুদ্দীন মোল্লা মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান ওয়াহিদুজ্জামান। সালথা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী ছিলেন। এদের একজন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামান ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর। ওয়াহিদুজ্জামান সড়ে যাওয়ায় এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বর্তমানে একজন প্রার্থী থাকলেন। তবে সরকারি ভাবে সরে যাওয়ার সময় আগেই অতিবাহিত হওয়ায় আগামী মঙ্গলবার ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণের পাশাপাশি চেয়ারম্যান পদেও ভোট গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর যুক্তি হিসেবে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে নির্দেশনা ছিল কোন এমপি, মন্ত্রী নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আমার মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে ‘প্লেইং ফিল্ড’ থাকবে। কিন্তু দেখা গেলে আমার মামলার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ও বিভিন্ন কর্মকান্ডে সরাসরি সকল কলকাঠি এ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর ওরফে লাবু ওয়াদুদ মাতুব্বরের পক্ষে করছেন। তিনি (সংসদ সদস্য) ওয়াদুদ মাতুব্বরে মুখপত্র হিসেবে ও প্রধান হিসেবে সব জায়গায় হস্তক্ষেপ করছেন। নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ভাবে ‘কনভিস’ করতেছেন। বিভিন্ন আইনজীবী ও হাইকোর্টে গিয়ে তিনি ওয়াদুদ মাতুব্বরের পক্ষে মামলার তদবির পর্যন্ত করছেন।
ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ মামলা থেকে শুরু করে ওয়াদুদ মাতুব্বরের সকল কার্যক্রম উনি (সংসদ সদস্য) নিজেই পরিচালনা করছেন। সেটা হয়তো ধরা ছোয়ার বাইরে। ঘরের ভিতর বসে করতেছেন। ক্যামেরার সামনে আসতেছেন না। ‘এমপির প্রভাবের কারণে এ নির্বাচন থেকে আমার সরে দাঁড়ানোর অন্যতম কারণ’-মন্তব্য করে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ নির্বাচনে সকল তৃনমূল নেতার সাথে এমপির যোগাযোগ এবং তার বাড়িতে এসেও অনেক মিটিং হয়েছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং তার মামলা মোকারর্দমার প্রধান তদবিরদায়ক আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী। এই সব কিছু ভেবে পাশাপাশি সহিংসতার কারন এ দুই কারনে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমি এমপির সাথে সরাসরি সংঘাতে যেতে চাই না।
সালথাকে একটি দাঙ্গাপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে আখ্যায়িত করে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমার নিজের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। পাশাপাশি হুমকির মুখে রয়েছে আমার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তার। তাই আমি সংঘাতের পথে যেতে চাইনি। এ কারনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। ওয়াদুদ মাতুব্বরের সাথে এ নির্বাচনে তার দীর্ঘ আইনী লড়াই নিয়ে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, গত ২১ এপ্রিল ছিল মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওইদিন আমি ও ওয়াদুদ মাতুব্বর মনোনয়নপত্র জমা দেই। গত ২৩ এপ্রিল যাচাই-বাছাই শেষে নিজ স্ত্রীর নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থাকায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটানিং কর্মকর্তা। পরে ওয়াদুদ জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করেও তিনি তার মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফিরে পাননি। এ অবস্থায় গত ১ মে আমাকে বিনাপ্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন রিটানিং কর্মকর্তা ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেরা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবির।
ওয়াহিদুজ¦জামান বলেন, মনোনয়ন ফিরে পেতে হাইকোর্টে রীট আবেদন করেন ওয়াদুদ মাতুব্বর। গত ১৩ মে সোমবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম ওয়াদুদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, গত ১৩ মে মনোনয়ন পত্র বৈধতা পাওয়ার পর ওয়াদুদের সমর্থকরা সালথায় একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আমার এক কর্মিকে কুপিয়ে জখম করে। তিনি বর্তমানে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। আমার নেতাকর্মীদের বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। ওয়াদুদের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন ওয়াহিদুজ্জামান।
গতকাল রবিবার শনানি শেষে ওয়াদুদের প্রার্থীতা বৈধ বলে ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। ওয়াদুদের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পর আজকের (গতকাল) এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ওয়াহিদুজ্জামান। এমপির প্রভাবের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর ওরফে লাবু চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ওয়াদুদ মাতুব্বরের প্রার্থীতার বৈধতা দিয়েছেন। সেখানে আমি লাবু চৌধুরী কি বললাম বা কি করলাম তাতে কিছু যায় আসে না। আমি এমপি হিসেবে কোন প্রভাব বিস্তার করিনি। তিনি কেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এটা তার বিচার্য বিষয়। সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর আরও বলেন, গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আমি আমার এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।
এক্ষেত্রে কোন পক্ষ বিপক্ষ আমার কাছে নেই। তিনি বলেন, তিনি এলাকায় যচ্ছেন না। বর্তমানে তিনি ঢাকাতে অবস্থান করছেন। অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, আমি নির্বাচনে জনগণের রায়ে ভয় পাই না। যারা জনগণকে ভয় পায় তারাই ষড়ন্ত্র করে আমাকে নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে রেখে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হতে চেয়েছিল। তবে তাদের সে আশা পূরণ হয়নি বলেই নির্বাচনের মাঠকে পিছুটান নিয়েছেন এবং আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যেল বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলছেন। সালথার রিটানিং কর্মকর্তা ও ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়াসিন বলেন, নির্বাচনের একদিন আগে কোন প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও যথারীতি চেয়ারম্যানসহ সব পদে ভোট গ্রহন করা হবে। সে প্রস্তুতি ইতিমধ্যে আমরা সম্পূর্ণ করেছি।
Leave a Reply