স্টাফ রিপোর্টার : হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী শ্যামা কালী পূজা। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে শ্যামা কালী পূজা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত (১১ নভেম্বর) রবিবার রাতে ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর গ্রামের কালিতলা এলাকায় নিয়মনিষ্ঠা ভাবে সনাতন রীতিতে ধুমধাম করে শ্রীশ্রী শ্যামা কালী পূজা করছেন এক মুসলিম সম্প্রদায়ের ছেলে। ভাবতে অবাক লাগলেও এমনটাই দীর্ঘ আট বছর ধরে পূজা করে আসছে। সেটাও আবার করছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন ছেলে মোঃ মাহাদী শেখ (২০)। গ্রামের এক মুসলিম ছেলে মাহাদীর হাতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সমস্ত রীতি-নীতি মেনে পূজিত হন শ্যামা মা কালী। এতে বিভিন্ন জেলার ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে মুসলিম এই ছেলে মাহাদী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই পূজার সূত্রপাত প্রায় আট বছর আগে থেকে শুরু। গ্রামের বাসিন্দারা জটিল রোগে অসুস্থ হয়ে পড়া অনেক রোগি এই মন্দিরে এসে আরোগ্য হয়েছে। জানান, কোনও চিকিৎসায় কাজ না হওয়ায় প্রাণের আশা প্রায় ত্যাগ করে এখানে এসে ভালো হয়েছে। হঠাৎ করেই মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান এই ছেলেটা। সেই স্বপ্নাদেশে ভর করেই শুরু করেন মা কালীর পুজো। একজন মুসলিম হয়ে এই পুজো শুরু করাটা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। তবে প্রথম প্রথম এক রকম চুপিসারেই নিজের উদ্যোগে মা কালীর পুজো শুরু করেন তিনি। ক্রমে লোকমুখে প্রচারিত হয়। এমনকি তাঁর পূজিতা কালী অত্যন্ত জাগ্রত বলেও এলাকার মানুষ মানতে শুরু করেন। তারপর থেকেই ভক্তি এবং নিয়মনিষ্ঠাই শাক্ত রীতিতে ধুমধাম করেই কালীপূজা করে আসছে।
গ্রামেরই বাসিন্দা রেখা সরকার জানালেন, “মুসলিম ছেলে হলেও তিনি একেবারে হিন্দু মতেই অনেকদিন ধরে এই কালীপূজা করে আসছেন। তাঁর কালী পূজা দেখতে গ্রামের মানুষের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও বহু মানুষ ছুটে আসেন। এই কালী অত্যন্ত জাগ্রত। মনের নানারকম প্রার্থনা নিয়ে ভক্তরা ছুটে আসেন এই মায়ের মন্দিরে। এখানে কোনও রকম ভেদাভেদ থাকে না। গ্রামে যদি কারও অসুখ বা কোনও সমস্যা হয়, তখন এই মাহাদীর কাছেই ছুটে আসেন গ্রামবাসীরা। গ্রাম ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে ছুটে আসেন অনেক ভক্তরা। স্থানীয়রা জানান, মুসলিম সম্প্রদায়ের মোঃ মাহাদী শেখ (২০) নামে মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্যামা কালী পূজা করে আসছে।
মাহাদী ছোট থেকেই কালী মায়ের ভক্ত। যেখানেই কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই তিনি উপস্থিত হতো। মা কালীর স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বাড়ীর পাশেই একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ছোট্ট একটি মন্দির ঘর বানিয়ে দেবীর আরাধনা শুরু করে তিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরটি এখন সুন্দর মন্দিরের রূপ পেয়েছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় “মা কালী মন্দির” করা হয়েছে। পাশাপাশি এই মন্দিরে প্রতি বছরের শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তিতে এখানে শ্রীশ্রী মনসা দেবীর পূজা করে থাকে মাহাদী শেখ। এছাড়াও প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে মায়ের প্রতিনিয়ত পূজা হয়ে থাকে।
সব ধর্মালম্বী মানুষজন এই মন্দিরে আসেন। ধর্মীয় রীতি মেনেই মন্দিরে পূজার সংকল্প হয় মোঃ মাহাদীর নামে। তিনি নিজেই দেবী মায়ের পূজা করে থাকে। পূজার দিনে সহস্রাধিক মানুষের সমাগম হয় এই মন্দিরে। ফরিদপুর সদরের গেরদা ইউনিয়নের নিখুরদি গ্রাম থেকে আসা এনায়েত বলেন, আমার স্ত্রীর পাইলসের সমস্যা জনিত জটিল রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক ডাক্তার দেখিয়ে কোন আরোগ্য লাভ পাই নাই। পরে এখানকার খবর পেয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসি এবং এখান থেকে রোগ মুক্ত হয়েছে। এখানে এসে উপকৃত হওয়ায় আমরা মায়ের পূজায় এসেছি।
Leave a Reply