মো.মনির হোসেন পিন্টু, চরভদ্রাসন :
দীর্ঘ ৮ বছর ধরেও চালু হয়নি ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গোপালপুর ও দোহারের চরমইনুট ঘাটের ফেরি চলাচল। নানা জটিলতায় বছরের পর বছর কেটে গেলেও চালু হচ্ছেনা চরভদ্রাসনের গোপালপুর ও দোহারের চরমইনুট ঘাটে ফেরি চলাচল।
জানাগেছে, ২০১৩ সালের ২২ জুলাই গোপালপুর- চরমইনুট ঘাট দিয়ে ফেরি চালুর বিষয়ে নৈাপরিবহন মন্ত্রলায়ের উপসচিব খাজা আ. হান্নান ঘাটটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই ঘাট চালুর বিষয়ে সিন্ধান্ত নেবে সরকার এমনটিই জানাগেছে। কিন্তু নানা জটিলতায় দীর্ঘ আট বছর পরেও ঐরুটে এখনো চালু হয়নি ফেরি চলাচল। অপরদিকে, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন ২০১৪ সালে তার নির্বাচনী ওয়াদা ছিল গোপালপুর-চরমইনুট রুটে ফেরি চালু করা। তিনি তার ওয়াদা বাস্তবায়নে এমপি’ নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যে গোপালপুর-মৈনটঘাটে ফেরি চালুর উদ্যোগও নেন। তারই উদ্যােগে চরভদ্রাসনের গোপালপুর পদ্মা নদীর ঘাটে সড়ক ও জনপদ বিভাগের দুটি ফেরি নিয়ে আসা হলেও নানা জটিলতায় আর চালু করা যায়নি। পরে, এমপি নিক্সন চৌধুরী বিআইডব্লিওটিএ’র ফেরি চালু উদ্যোগ নেন এবং আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই রুটে ফেরি চালুর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ওই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিওটিএ’র চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক, প্রধান প্রকৌশলী মহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলামসহ ঊর্দ্ধতন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের একটি দল গত বছরের জুন মাসে ফেরিঘাট ও নৌরুটটি পরিদর্শনে আসেন। বিআইডব্লিওটিএ’র চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক জানান, সড়ক বিভাগের মাধ্যমে এমপি নিক্সন এখানে ফেরি চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিষয়টি নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের, সেজন্যই সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে ফেরি চালু করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ জরিপসহ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। খুব শীঘ্রই এখানে ফেরি চালু হবে। সেজন্য ড্রেজিং করা, সংযোগ সড়কটি চওড়া ও ঘাট নির্মাণ করতে হবে। ফলে এ সপ্তাহ থেকেই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। সড়ক বিভাগ সংযোগ সড়কটি চওড়া করে দিলেই ফেরি চালু করা সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, এর আগেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আগামী মাসের মধ্যেই সি-ট্র্যাক চালু করা হবে। যাতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই যাতায়াত করতে পারেন। একই সময় এমপি নিক্সন চৌধুরী বলেন, ফেরি ঘাটটি চালু বিষয়টি আমার নির্বাচনী ওয়াদা। পুরো প্রক্রিয়া শেষের পথে। আগামী মাস থেকে সি-ট্র্যাক ও ৪/৫ মাসের মধ্যে ফেরি চালু হবে। কিন্তু সকল প্রক্রিয়া শেষ হলেও দীর্ঘ আট বছর পরেও ওই রুট দিয়ে এখনো ফেরি চলাচল চালু হয়নি। গোপালপুর-চরমইনুট রুটে ফেরি চলাচল চালুর ব্যাপারে চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাউছার হোসেন জানান, এই রুটে ফেরি চলাচল হলে চরভদ্রাসন, পার্শ্ববর্তি সদরপুর, ভাঙ্গা, ফরিদপুরসহ আশেপাশের অনেক জেলার মানুষ খুব অল্প খরচে এবং স্বল্প সময়ে এপার ওপার যাতায়াত করতে পারবে। ফলে তাদের ভোগান্তি ও সময় অনেকাংশে লাঘব হবে। পাশাপাশি এই রুটে ফেরি চলাচলের জন্য এপারের উপযুক্ত রাস্তা না থাকা আর নদীর নাব্যতা সংকটকেও তিনি বড় বাধা বলে মনে করেন। অপরদিকে ফেরি চলাচলের ব্যাপারে একাধিক স্থানীয় এ প্রতিবেদককে বলেন, এ পাড় ফরিদপুরের চরভদ্রাসন-গোপালপুর, অপর পাড় ঢাকার দোহার-কার্তিকপুর এলাকা। এ পাড়ের যাত্রীরা নদী পার হয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা পৌঁছাতে পারেন। সেজন্য এই অঞ্চলের ঢাকাগামী বেশিরভাগ যাত্রী প্রতিদিন গোপালপুর-মৈনট ঘাট দিয়ে পদ্মা নদী পার হন। তারা আরও বলেন, এ রুটে ফেরি চলাচলের ব্যাবস্থা করলে প্রথমে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। অন্যদিকে দুই পাড়ের মানুষেরও সময়-অর্থ সাশ্রয় হবে। উপকৃত হবে দুই পাশের ৮-১০ জেলার মানুষ। এমনকি গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইলসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে রাজধানীসহ পূর্বাঞ্চলের বাজারে পণ্য পাঠানোও সহজ হবে। এছাড়া তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ফেরিটি ফাকা জায়গায় পরে থাকায় দুষ্কৃতকারীরা ফেরির অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও মালামাল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে চরভদ্রাসন উপজেলার পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাটে চলার অপেক্ষায় অলস পরে থাকা একটি ফেরি অযত্নে-অবহেলায় ধ্বংসের মুখে। ফলে চরভদ্রাসনবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি গোপালপুর- চরমইনুট ঘাটে ফেরি চালুর স্বপ্ন- স্বপ্নই রয়ে গেলো।
Leave a Reply