বোয়ালমারী সংবাদদাতা : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে যুবককে মারপিট করায় টিকটকে লাইভ করে আবেগঘণ বক্তব্য দিয়ে অভিমানে গালায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার করার অভিযোগ উঠেছে। মৃত যুবক উপজেলার চতুল ইউনিয়নের পোয়াইল গ্রামের স্বপন সরকারের ছেলে স্বদেশ সরকার (২৫)। বুধবার দিনগত রাত ১টার দিকে তার শোয়ার ঘর থেকে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় পরিবারের লোকজন তার লাশ উদ্ধার করেন।
মৃত যুবকের পরিবারের ধারণা রাগেক্ষোভে বুধবার রাতে নিজ ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, স্বদেশ সরকারের কাছ থেকে পোয়াইল গ্রামের মো. জাকারিয়া শেখের ছেলে রাজমিস্ত্রি রিয়াজ শেখ ১৫০টাকা ধার নেয়। পরে রোববার ১৬জুলাই বিকেলে সে ধারের টাকা স্বদেশ চাইতে গেলে রিয়াজ শেখ তাকে বেধরক মারপিট করে।
ওই পাওনাদার যুবককে মারলে তিনি তার টিকটক ভেরিফাইড পেজে ১ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড লাইভ করে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ” ভাই আমি টিকটক করি, হয়তো আমারে অনেকে চেনেন, আমার বাড়ি ফরিদপুর বোয়ালমারী থানা, চতুল ইউনিয়ন গ্রাম হচ্ছে ভাই পোয়াইল, আমার নাম স্বদেশ সরকার, ভাই আমি হলো আমার গ্রামের জাকারিয়ার ছোট ছেলে রিয়াজ তার নাম, সে আমার কাছ থেকে ভাই দেড়’শ টাকা নেছে। তার কাছে টাকা চাই।
সে টাকা দেয়না। টাকা না দিয়ে আমারে মুখে ও ঘারে ঘুষি মারছে, আমি কইছি ভাই আমার টাকা দিবি নে। তখন ও কয় কিসের টাকা। বাবুরবাজারে সবার সমানে মারছে, কেউ আমার পক্ষে একটা কথাও বলেনিরে ভাই। আমার দুঃখ ওই জায়গারে ভাই। আমি ভাই পুলিশ প্রশাসনকে উদ্যেশ্য করে বলি এই ভিডিও যদি বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের কাছে যায়, তাহলে আমি যেন এই বিচারডা অবশ্যই পায়। এই ভিডিওটা শেয়ার করে দেন ভাই, যেন বাংলাদেশ প্রশাসনের নজরে যায়।”
যুবকের বাবা স্বপন সরকার বলেন, আমরা সবাই পাশের বাড়ি নামযজ্ঞানুষ্টানে যায়। ফাঁকা বাড়ি পেয়ে ছেলে আমার গলায় ফাঁস নিয়ে মারা যায়। রাতে বাড়িতে এসে দেখি ঘরে দরজা আটকানো। দরজা খুলতে বললে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে দেখি আড়ার সাথে গলায় ফাঁস নিয়েছে। আমার ছেলেকে মারার কারণে সে রাগেক্ষভে অভিমানে এ কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার কারণে অপমানিত হয়ে আমার ছেলে মারা গেল আমি তাঁর বিচার চাই। আর যেন কোন পিতার বুক এভাবে খালি না হয়।
মৃত যুবকের খালাতো ভাই সঞ্জায় বলেন, আমার খালাতো ভাইকে বাবুরবাজরে প্রকাশ্যে মারধর করার কারণে অভিমানে সে গলায় ফাঁস নিয়ে মারা গেছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে প্ররোচনাকারীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই। তবে রিয়াজের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। রিয়াজের বাবা জাকারিয়া শেখ মুঠোফোনে বলেন, মারামারির খবর শুনে ওই দিন আমার ছেলেকে মারধোর করেছি। তবে ওই পরিবারের কেউ আমাকে জানাইনি।
আমার ছেলে অপরাধ করলে তার যে সাজা হয় হোক আমার কোন সমস্যা নেই। তবে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মারামারি হয়েছে ৬দিন আগে সে মারা গেল গতকাল। আর ওই ছেলে টিকটক ভিডিও অনেক আগে থেকে আপলোড করে। কি করাণে আত্মহত্যা করেছে বলতে পারিনা। বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। সুরতহাল করে যুবকের লাশ ফরিদপুর পোস্টমর্টেমে পাঠানো হয়েছে। মৃত যুবকের পরিবার অভিযোগ দিলে সত্যতা জেনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
Leave a Reply