স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ইতি নামে এক গৃহবধূর গলায় রশি দিয়ে আতœহত্যার ঘটনাকে রহস্যজনক দাবি করে ইতির সতিন মনোয়ারা বেগম ও স্বামী মিজান শেখ তাকে হত্যা করেছে মর্মে অভিযোগ তুলছে ভুক্তভোগী পরিবার। এ নিয়ে ইতির বড় ভাই মো: শফিকুল শেখ অভিযোগ করে জানান, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের দিগনগর বাজার এলাকার মৃত মো: নবী শেখ এর কন্যা ইতি বেগম (২১) এর সাথে একই উপজেলার বুরাইচ ইউনিয়নের মিজান শেখ (৫৮) এর প্রথম স্ত্রী কোনদিন ফিরে আসবেনা মর্মে নিশ্চিত হয়ে তার সাথে বিবাহ দেওয়ার প্রায় ১৪ মাস ধরে এ দম্পত্তি ঘরসংসার করে আসছে। গত ১৫ দিন আগে মিজানের আগের স্ত্রী ফিরে আসলেই শুরু হয় দুই স্ত্রীর বাকবিতন্ডা। এমনকি তার স্বামীও প্রথম স্ত্রীর কথা মত ইতিকে প্রায়ই মারধোর করত।
এ নিয়ে একাধীকবার ইতি আমাদের জানালেও এর কোন ধরনের সমাধান করতে পারিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ ই এপ্রিল আমাদের কাছে একটি ফোন আসে যে, ইতি আগের দিন গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে আমাদের ধারনা পারিবারিক কলহের জের ধরে মিজান ও তার প্রথম স্ত্রী আমার বোনকে হত্যা করে বর্তমানে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার পায়তারা করছে। এমনকি এত বড় একটি ঘটনা প্রথম দিন আমাদের কাউকে না জানিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ারও চেষ্টা করেছে তারা। এ বিষয়ে শফিকুলের বড় বোন বিউটি বেগম ও তার স্বামী একই অভিযোগ করে, সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে হত্যার ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেন।
এ দিকে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, মিজানের আগের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম দীর্ঘ ২৮ বছর ঘর সংসার করে ৬ সন্তানের জননী হওয়ার পর মোট ৩ সন্তান কে বিবাহ করায়। তবে গত ১৮ মাস আগে মনোয়ারা অন্য একটি পুরুষের সাথে চলে যাওয়ার প্রায় ৬ মাস পরে পুনরায় ফেরত এসে ২ সপ্তাহ থেকে আবার চলে যাওয়ার পর প্রায় দুই আড়াই মাস পর্যন্ত মনোয়ারা বেগমের আর কোন খবর ছিলো না। এর আনুমানিক ১ বছর পুর্বে মিজান ১ টি কণ্যা সন্তান সহ ইতি বেগমকে বৃদ্ধ বয়সে বিয়ে করে। তবে ইতি বেগমের পুর্বে ঢাকায় বিবাহ হওয়ার পর তার স্বামী বকাটে হওয়ায় পরিবারের লোকজন ঐ স্বামীর কাছ থেকে সন্তানসহ ফেরত নিয়ে আসে।
গত ১৫ দিন আগে মিজানের প্রথম স্ত্রী মনোয়ারা পুনরায় ফিরে আসার পরেই দুই স্ত্রী মিলে ঝগড়া বিবাদ করে আসছিলো। গত ৬ এপ্রিল দুই বধূর লাকড়ি ভাগাভাগির বাক বিতন্ডা সুত্রপাতকে কেন্দ্র দুইজনের মধ্যে মান-অভিমান হয়। একপর্যায়ে মান-অভিমান ও পারিবারিক অন্যান্য কলহের জের ধরে ইতি বেগম আত্মহত্যা করতে পারে মর্মে প্রাথমিক তদন্তে ধারনা করছে পুলিশ। তবে ভুক্তভোগি পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত মিজান শেখ মুঠোফোনে জানান, ঘটনার দিন বিকালে লাকড়ি নিয়ে দুই বধূর বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হলে আমি ঐ লাকড়ি গুলো ভাগ করে দুই বধূকে দিয়ে দেই। এই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ইতি ঘরে গিয়ে দড়জা আটকিয়ে দেয়। কিছু সময় পর আমার ছোট ছেলে ঘরের উপর দিয়ে উঠে উকি দিয়ে দেখতে পায় যে ইতি গলায় দড়ি দিছে। তার পরেই দ্রæত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে নিতে মারা যায় বলে পরবর্তি প্রশ্ন করার আগেই মুঠোফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, ঘটনাটি জানা মাত্রই আমি আমার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারি পারিবারিক মানঅভিমানের সুত্র ধরে আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটতে পারে। পরে মিজান ও তার স্ত্রীকে আমাদের জিম্মায় নিয়ে আইনগত পক্রিয়া শেষে দুজনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। একই সাথে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে পরবর্তি আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply