স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেছেন, সামাদ খান একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে, মাদক প্রতারণা, আপহরণসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মাদক এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারসহ তার গাড়িটি জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনাকে ভিন্নখাকে প্রবাহিত করার জন্য সামাদ খান ঢাকার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন পুলিশ সুপার। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংএ এ কথা জানান পুলিশ সুপার।
সামাদ খান (৩৬) ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর এলাকার মৃত মজিদ খানের ছেলে। তিনি পেশায় একজন হারবাল ঔষধ ব্যবসায়ী। মধুখালী বাজারে তাঁর ওই ওষুধের দোকানটি রয়েছে। প্রসঙ্গত সামাদ খান গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ফরিদপুর জেলা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ, ডিবি মো. রাকিবুল ইসলাম তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। মিথ্যা মামলার ভয় ভীতি দেখাচ্ছেন। তিনি এ ব্যাপারে নিজের নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, গত ১৯ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মধুখালী থেকে ফরিদপুর আসার পথে একটি মসাইক্রোবাসকে ঢাকা-খুলনা মহা সড়কের বদরপুর এলাকায় গতিরোধ করে পুলিশ। ওই সময় মাইক্রোবাসের চালক পুলিশ দেখে মাইক্রোবাসটি ফেলে পালিয়ে যান। মাইক্রোবাস তল্লাশি করে মধুখালীর বনমালিদিয়া এলাকার মো. আলী আকবর ফকির (৫০), কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জসিম উদ্দিন (৩৮), কক্সবাজারের মো. ফারুক (৩২), মো. খোকন তারেক (২০), ফরিদপুরের নগরকান্দার মো. ইমরুল কাজী (৩৭) ও মধুখালীর সুশান্ত (৩৫) কে ৩ হাজার ৫৮২টি (তিন হাজার পাঁচশত বিরাশি) পিচ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক করা হয়।
এ ব্যাপারে গত ২০ জুলাই ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলাদায়ের করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে আলী আকবরের নামে ১৩টা মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। একটি মাদক মামলায় তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ছিলেন। এছাড়া খোকন তারেকের নামে ডিএমপি খিলখেত থানায় মাদক আইনে একটি মামলা রয়েছে। তারা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে মাদক নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাদক সরবরাহ করে থাকেন। ওই মাইক্রোবাসের মালিক ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর এলাকার সামাদ খান।
লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান আরও জানান, ঢাকায় সামাদ খানের সংবাদ সম্মেলনের পর জেলা পুলিশ প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানতে পারে সামাদ খান এর সাথে ওসি, ডিবি রাকিবের পরিচয় ২০১৭ সালে নিজ শ্যালিকাকে অপহরণের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলার মাধ্যমে পরিচয় ঘটে। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন রাকিব। নারী নির্যাতনের মামলায় সামাদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ায় তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তা রাকিবের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। পুলিশ সুপার আরও বলেন, সামাদ খান অবৈধ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এবং তার নামে একাধিক মামলা আছে। মাদক ব্যবসাকে আড়াল করার জন্য মুলত তিনি পুলিশ এর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
ওই লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, সামাদ খানের কাছ থেকে ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট ৩ হাজার ১৫০ টি ইয়াবা, এক বোতল ফেন্সিডিল, দুই বোতল বিদেশী মদ, ৬৯০টি যৌন উত্তেজক বড়ি উদ্ধার করে র্যাব-৮ ফরিদপুর। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে তার নামে তিনটি মামলা দায়ের করে। মাদক ছাড়াও মামলাগুলির মধ্যে একটি প্রতারণার। ওই অভিযানের সময় র্যাব সামাদ খানের কাছ থেকে এক জোড়া কালো রংয়ের বুট জুতা, একটি নেভী বøু রংয়ের ব্যারেড ক্যাপ, যাতে পুলিশের মনোগ্রাম সংযুক্ত উদ্ধার করে। তিনি সরকারী কর্মচারীর ছদ্মবেশ ধারন করে প্রতারনা করতেন বলে র্যাব প্রতারণার অভিযোগে মামলাটি করে। লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, সামাদ খান একজন দুশ্চরিত্র ব্যক্তি।
মধুখালীতে তার নামে নারী নির্যাতনের মামলা আছে। তিনি নিজের শ্যালিকাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার শ্বশুর থানায় এসে অভিযোগ দিলে পুলিশের সহায়তায় মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। ২০১৭ সালের ১২ জুলাই মধুখালী থানায় সামাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি অপহরণ মামলা হয়। এ মামলার বাদী হন সামাদের শ্যালিকা নিজেই। লিখিত অভিযোগে পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আরো জানা যায় যে, সামাদ খান মুলত অন্যের মাইক্রোবাসের ড্রাইভার ছিলেন।
থানার বিভিন্ন সরকারী প্রয়োজনে যখন রিকুইজিশিনে মাইক্রোবাসটি নেয়া হতো তখন ড্রাইভার হিসেবে সামাদ এর থানা পুলিশের সাথে পরিচয় ছিল। সে পরিচয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে পুলিশের আড়ালে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করতেন। মধুখালীতে তার হারবাল ঔষধের দোকানে বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন অবৈধ ঔষধ রাখতো বলে জানা যায়। উক্ত ঔষধের দোকানের আড়ালে ফেন্সিডিল ও ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যায়। এভাবে তিনি ধীরে ধীরে মাদকের গডফাদার হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে এবং প্রচুর টাকার মালিক হন।
Leave a Reply