আঃওহাব মোল্যা, চরভদ্রাসন : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরহাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের জমিতে গড়া অবৈধ স্থাপনার সাথে ৪ নং গাজীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কার্যালয় উল্লেখ করে স্থানীয় একটি মহল সাইনবোর্ড লাগিয়ে উচ্ছেদ মুক্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে গত ২৬ জুলাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপার নেতৃত্বে দিনভর উক্ত বিদ্যালয় মাঠে গড়া প্রায় ৪০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এতে বিদ্যালয়টি ফিরে পেয়েছে তাদের বেদখলীয় ৫৩ শতাংশ জায়গা জুড়ে খেলার মাঠ সহ শহীদ মিনার। কিন্ত এ উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিম সীমানায় চরহাজীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন প্রধান সড়ক ঘেষে উক্ত স্থাপনার গায়ে আ’লীগ অফিসের সাইনবোর্ড দেখে যাচাই বাছাইয়ের স্বার্থে কালক্ষেপন করেন সংশ্লিষ্টরা। ওই একই ঘরে বিগত দিনে ‘গাজীরটেক অটোরিক্সা সমবায় সমিতি লিঃ’ নামক অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। আবার একই স্থাপনার গায়ে হঠাৎ করে আওয়ামীলীগ অফিসের সাইনবোর্ড দেখে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে গত ক’দিন ধরে উক্ত এলাকার বিভিন্ন মহলের মধ্যে আলোচনার ঝড় ওঠেছে।
জানা যায়, গত ২৭ জুলাই উপজেলায় অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভার প্রধান অতিথি ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন) উক্ত স্থাপনাটির ব্যপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সুষ্ঠ তদন্ত মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, “পাঁচ দফা নোটিশ দেওয়ার পরও বিদ্যালয় জায়গার ঘরগুলো সরানো হয় নাই। অভিযানের মাত্র তিনদিন আগে স্থানীয় একটি মহল স্থাপনার গায়ে ‘৪ নং গাজীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কার্যালয়’ উল্লেখ করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে স্থাপনাটি উচ্ছেদ মুক্ত রাখতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থাা গ্রহনের স্বার্থেই স্থাপনাটি উচ্ছেদের ব্যপারে সময় নেওয়া হয়েছে”। গত শুক্রবার, সরেজমিনে বিদ্যালয় মাঠ ঘুরে জানা যায়, প্রায় সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিদ্যালয় মাঠ ও শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র মাঠের পশ্চিম সীমানায় পাকা সড়ক পাশ দিয়ে তিনটি দোকান ঘরের সংলগ্ন গাজীরটেক ইউনিয়ন আ’লীগ কার্যালয় সাইনবোর্ড সম্বিলিত স্থাপনা পড়ে রয়েছে।
ওই তিন দোকান ঘর মালিক ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ন আহবায়ক আহসানুল হক মামুন জানায়, “সাইনবোর্ড সম্বিলিত ঘরটি দীর্ঘকাল ধরে আ’লীগের অফিস ছিল। উক্ত ঘরে বসেই স্থানীয় আ’লীগের সমস্ত মিটিং সিটিং পরিচালনা করা হয়েছে। আর অনেক বছর আগে তিনি সাবেক স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাছ থেকে জমি লীজ নিয়ে উক্ত তিনটি দোকান ঘর নির্মান করেছেন বলেও জানান”। একই দিন চরহাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাদ আবুল কালাম বলেন, “বিগত দিনে আ’লীগের নেতৃস্থানীয়রা এলাকায় এসে ওই ঘরে বসে মিটিং সিটিং করছেন এটা সত্য, তাই বলেতো ঘরটা আওয়ামীলীগের অফিস নয়। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এলাকায় এসে বিভিন্ন স্কুল মাঠে জনসভা করে থাকেন, তাতে করে মাঠটি কোনো দলের হয় না। আর স্কুলের জমি লীজ প্রদানের বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান”। একই দিন উক্ত স্থাপনার ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, আ’লীগ অফিসের সাইবোর্ডের পাশাপাশি ‘গাজীরটেক ইউনিয়ন অটোরিক্সা সমবায় সমিতি লিঃ’নামক আরেকটি সাইনবোর্ড রয়েছে। উক্ত সমবায় সমতিটি ১১ আগষ্ট, ২০১৫ ইং সালে সরকারিভাবে রেজিষ্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। রেজিষ্ট্রেশন নং-২৪।
উক্ত সমবায় সমিতির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য শেখ শহীদুল ইসালমকে স্থাপনাটির ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান,“ উক্ত স্থাপনার পুরো ঘরটি গাজীরটেক ইউনিয়ন অটোরিক্সা সমবায় সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে গড়া। আমি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বর্তমানে সমিতির কার্যক্রম জোড়ালোভাবে চালু না থাকলেও আগে সমিতির যাবতীয় কার্যক্রম উক্ত অফিস থেকেই পরিচালিত হতো। সম্প্রতী কে বা কারা উক্ত ঘরে আ’লীগের সাইনবোর্ড লাগিয়েছে তা আমি কিছুই জানি না”। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে উপজেলার চরহাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়টি ২ একর ৪৬ শতাংশ জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০০১ সালে পদ্মা নদীর ভাঙনের অনেকাংশ বিলীন হয়। পরে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হলে দখলদাররা একের পর এক দোকান ঘর উঠিয়ে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সহ শহীদ মিনার গ্রাস করে রেখেছিল। দীর্ঘ্য ২০ বছর পর বিদ্যালয়ের জমিগুলো দখলমুক্ত হলো। স্থানীয় জনগন প্রশাসনকে ধন্যবান জানান।
Leave a Reply