চরভদ্রাসন সংবাদদাতা : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ ঘেষে প্রবহমান ভুবেনশ্বর নদ। নদটি চলতি শুস্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে নি¤œ চরভুমির রূপ নিয়েছে। এ নদের দুই কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে শত শত বসতি পরিবার ও দোকানপাট। সম্প্রতী, এ নদের কোল জুড়ে নদী সিকস্তী জমিতে ভিটি নির্মান করে বসতি পরিবার গড়ার হিঁড়িক পড়েছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে উপজেলা সদরের একমাত্র নদের আদি ঐতিহ্য এবং নদী মাতৃক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লাখো জনগোষ্ঠী। জানা যায়, উপজেলা সদের এ নদের দু’কুল জুড়ে রয়েছে শত শত বসতি পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রত্যোক বসতি নিজেদের বাড়ীর সীমানার নদী সিকস্তীর পতিত জমিগুলো দিনের পর দখল করে নিচ্ছেন।
এতে দিন দিন বেদখলে চলে যাচ্ছে ভুবেনশ্বর নদটি। গত ক’দিন ধরে উপজেলা সদরে স্বাধীনতা চত্তরের উত্তর দিকে উক্ত নদের পার থেকে প্রায় ৬ শতাংশ নদীভুমি জুড়ে উচু ভিটা বেঁধে বসতবাড়ী নির্মান করছেন পার্শ্ববতী আব্দুল শিকদার ডাঙ্গী গ্রামের মৃত শেখ হাকিমের ছেলে শেখ মামুন (৩৮)। একই সাথে উপজেলা বাজার মসজিদের অপর পারে প্রায় ৪ শতাংশ গোসলের ঘাটলা জমি আটকিয়ে উচু ভিটি বেঁধে একচালা টিনের স্থাপনা পুতে দখল করেছে বিএস ডাঙ্গী গ্রামের আবুল খায়ের ফকিরের ছেলে সাগর ফকির (৩০)। আবার উপজেলা সরদ বাজারের প্রায় ২ কি.মি. নদী পার এলাকার শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা নিজেদের দোকান ঘর মেরামত ও সম্প্রসারনের নামে দখলে নিয়ে নিচ্ছেন নদী সীমানার উন্মুক্ত পতিত জমি। এতে বিলীন হতে বসেছে উপজেলা সদরের একমাত্র নদটির অস্তিÍত্ব।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলা মধ্য বিএস ডাঙ্গী গ্রামের স্বাধীনতা চত্তরের উত্তর পাশে হাসপাতালের সামনের নদী সীমানার প্রায় মধ্যবর্তি এলাকা থেকে নদী পারের পাকা রাস্তা পর্যন্ত অনেক গভীর নদীভুমি ট্রাকে ট্রাকে মাটি ফেলে ভিটে বেঁধে বসতবাড়ী নির্মান করে চলেছেন শেখ মামুন (৩৮)। তাকে বার বার নদীর জমি দখলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,“ ভাই আমি এখন ব্যাস্ত আছি, আপনার সাথে পরে দেখা করে আমি কথা বলবো”। উক্ত নদী পার এলাকার আরেক দখলদার যিনি গোসলের ঘাটলা জমি জুড়ে ভিটি বেঁধে একচালা স্থপনা পুতে রেখেছেন।
সেই সাগর ফকির (৩০) জানায়,“ আশপাশের নদী পারের বসতিরা যেভাবে খরিদা জমির সীমানা করে নদী পার দখল করেছে আমিও সেভাবেই দখলে আছি। আর উক্ত জমি আমরা রেকর্ডীয় মালিক আঃ আজিজের কাছ থেকে খরিদ করে দখলে আছি”। একই সময় উক্ত দখলদারের জমির আদি মালিক মৃত সোনাউল্ল্যার ছেলে আঃ আজিজ মোল্যা (৬০) বলেন, “উক্ত নদীর জমিগুলো এসএ রেকর্ডে ব্যাক্তি মালিকানাধীন ছিল, কিন্ত সরকার হাল জরিপে বা দিয়ারা রেকর্ডে ওই নদীর সবজমি সিকস্তী ভুমি বা খাস করে ফেলেছেন বিধায় ভুবেনশ্বর নদের জমিগুলো এখন ব্যাক্তি মালিকানা দাবী করতে পারছি না”। উল্লেখ্য, উক্ত বেদখলীয় জমিগুলো দিয়ারা ১১ নং চরভদ্রাসন মৌজার ১৭৬৫ নং খতিয়ানের ৮১৭১ নং দাগে উক্ত নদীর জমি মানচিত্রে সিকস্তী ভুমি হিসাবে দেখানো রয়েছে।
এ ব্যপারে চরভদ্রাসন ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) আবু বক্কার ছিদ্দীক বলেন, উক্ত দখলদারদের বার বার নিষেধ করার পরও তারা থেমে থেমে নদী সিকস্তীর জমি দখল করে চলেছে। কিছুদিন আগেও আমি ইউএনও’র কাছে দখলদারদের বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছি, কিন্ত তারা ক’দিন থেমে থেকে আবারও সিকস্তী জমিতে ঘর উঠানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে”। আর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) এসএম রাসেল ইসলাম নূর বলেন,“ আমি অত্র উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি, নদী অবমুক্ত করার জন্য যা প্রয়োজন, সব ব্যাবস্থা নেওয়া হবে”।
Leave a Reply