স্টাফ রিপোর্টার :
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৩ সনের এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া আক্তারের এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র আটকে রেখে টাকা দাবির প্রতিবাদ ও বাধ্যতামূলক কোচিং বানিজ্য বন্ধের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর পরিবার। এসময় উল্লেখিত ঘটনার প্রতিবাদ করায় ওই শিক্ষার্থীর চাচাতো ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ আশিকুজ্জামান হৃদয়ের উপর সহকারী প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবী জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে গাজনা ইউনিয়নের মধুরাপুর গ্রামে শিক্ষার্থীর নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীর চাচাতো ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ আশিকুজ্জামান হৃদয় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার বোন সাদিয়া আক্তার মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক কোচিং করতে বলা হয়, এবং কোচিংয়ে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত না থাকলে জরিমানা করার আগুম হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার বোন অসুস্থতার কারনে এক সপ্তাহ কোচিংয়ে অনুপস্থিত থাকায় ৬০০ টাকা জরিমানা দাবী করে টাকা পরিশোধ না করলে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশ পত্র ও রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দেয়া হবেনা বলেও হুমকি প্রদান করেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ ফারুক হোসেন। সাদিয়া বিষয়টি বাড়িতে এসে খুলে বললে আমি, আমার বোন সাদিয়া আক্তার, সাদিয়ার মা বীনা বেগম এবং পিতা মোঃ হাচান বিশ্বাস গত ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সেখানে উপস্থিত হয়ে বাধ্যতামূলক কোচিং বানিজ্যের প্রতিবাদ করে জরিমানা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং স্কুলের দপ্তরী মোঃ আবু বকর সিকদার ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেনের ভাতিজা মোঃ তাজ মোল্যা সহ কয়েকজন আমাকে কিল ঘুষি মেরে শার্ট ছিড়ে ফেলে। আমার চাচীকেও (সাদিয়ার মা) অপমান করে দেখে নেয়ার হুমকী দেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ ঘটনার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুকুমার চক্রবর্তী দাড়িয়ে থেকে দেখে নিরব ভূমিকা পালন করেন।
পররর্তীতে বাধ্যতামূলক কোচিং বানিজ্য ও জরিমানা না দিলে আমার বোনের এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র আটকে রাখার প্রতিবাদে আমি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার বরাবর ঘটনার দিন মঙ্গলবারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি এবং আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলার প্রতিবাদে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন, দপ্তরী মোঃ আবু বকর শিকদার, ও তাজ মোল্যার নামে একই দিনে মধুখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীর পরিবার দাবি করেন সারাদেশে সরকার কোচিং বানিজ্য বন্ধ করার ঘোষনা করলেও উপজেলা বিভিন্ন স্কুলে কোচিং বানিজ্য চালু রয়েছে। যা আমাদের মত অনেক গরীব পরিবারের উপর অতিরিক্ত অর্থের বোঝা বলেও দাবী করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক খাতা স্বাক্ষর করানো বাবদ অতিরিক্ত ৫০ টাকা করে না দিলে ব্যবহারিক খাতায় শিক্ষকেরা স্বাক্ষর করছেন না। এমনকি বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট সাবজেক্টের শিক্ষকের নিকট প্রাইভেট না পড়লেও পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করানো হুমকী দিয়েও প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করানো হয় বলেও অভিযোগ করেন অভিযুক্ত পরিবারটি।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, কোচিং নয় অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া হয়েছে, ভালো ফলাফল অর্জন করানোর লক্ষ্যে। তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে ক্লাসে উপস্থিত হয় সে লক্ষে তাদেরকে জরিমানার ভয়ভীতি দেখানো হয়, এর বাইরে কিছু নয়। তিনি জানান, স্কুলে আমার সাথে তেমন কিছু হয়নি, কথা বলাবলির এক পর্যায়ে ওই ছেলে স্কুলের বাইরে গিয়ে আজেবাজে কথা বলায় আমার ভাতিজা তাজের সাথে বাক বিতন্ডা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে দপ্তরী তাকে জড়িয়ে ধরে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুকুমার চক্রবর্তী জানান, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি জানান, ওই ছাত্রীর কাছে বিদ্যালয়ের কিছু টাকা পাওনা ছিলো, যা পরিশোধ করতে বলা হয়। কিন্তু ওই ছাত্রীর অবিভাবক (চাচা) সুপারিশ করায় ২৫ এপ্রিল সাড়ে ১০টার দিকে আসতে বলা হয় প্রবেশপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এর আগেই ওই শিক্ষার্থীর চাচাতো ভাইসহ অবিভাবকরা এসে উশৃঙ্খল আচরণ করে। এসময় সহকারী প্রধান শিক্ষকের সাথে বাকবিতন্ডা হয়, তখন সম্ভাব্য মারামারি এড়াতে স্কুলের দপ্তরী ওই ছেলেকে টেনে ধরে দুরে সরিয়ে দেয়। তবে ওই ছাত্রীর কাছে কোন খাদের টাকা পাওনা ছিলো তা তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি ওই প্রধান শিক্ষক। এদিয়ে ওই বিদ্যালয়ে কোনো ধরনের কোচিং করানো হয়না জানিয়ে বলেন, স্কুল কমিটি ও অবিভাবকদের সাথে আলোচনা করে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া হয়। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কাছে প্রাইভেট না পড়লে ফের করিয়ে দেয়ার হুমকীর বিষয়টিও সত্য নয় বলে দাবী করেন তিনি। তিনি জানান ২৭ এপ্রিল দুপুরে ওই শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের সভাপতি, মধুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। #
Leave a Reply