ফরিদপুর প্রতিনিধি:
“মানুষ মানুষের জন্য”। আর মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করাই বড় ইবাদত। মানুষকে ভালোবাসার মাঝেই আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। এরকমই স্বপ্ন যিনি মনে লালন করেন তিনি হলেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলীমুজ্জামান বিপিএম-সেবা। তিনি অনন্য এক মানবতার দ্বার উন্মোচন করেছেন ফরিদপুরের মানুষের জন্য।
তাঁর অফিসের দরজা অবারিত খোলা থাকে যেকোন অসহায় মানুষের জন্য। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত যে কোন মানুষ তার কাছে হাজির হতে পারেন। মুখ খুলে কথা বলতে পারেন যেকোন সমস্যা নিয়ে। তাঁর মানবতা ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি বিচার প্রার্থী থেকে অসহায় যে কোন মানুষের কাছে ফরিদপুরের অলিতেগলিতে।
এমনই মানবতার নিদর্শন নিয়ে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১২ টায় ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষীপুর মডেল টাউন এলাকায় ভিক্ষুক এক নারীকে বাড়ি ও দোকান ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান। এর আগেও তিনি একজন বীরঙ্গনাসহ বেশ কয়েকজন অসহায় পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। করোনার প্রথম থেকে অসহায় মানুষের খাদ্য সামগ্রী, মাস্ক ও স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ, রোজায় খাদ্য ও ইফতার বিতরণ, রাতে শীতার্ত মানুষের মাঝে ঘুরে ঘুরে কম্বল বিতরণ, সন্ত্রাস, চোর, ডাকাত, মাদক দমনে অনন্য এক নজীর, বছরের প্রতিটি রাতে জেলার অসহায় ভবঘুরে মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করে তিনি এখন ফরিদপুরের মানবতার ফেরিয়ালা।
এমনই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সোমবার ফরিদপুর শহরের লক্ষীপুর মডেল টাউন এলাকায় মাহফুজা বেগম(৪৭) নামে ওই নারীর হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেন পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামান। এসময় ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার, কোতয়ালী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. গাফফার হোসেন, পুলিশ লাইন্সের রিজার্ভ অফিসার-১ আনোয়ার হোসেনসহ পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। চাবি হস্তান্তর শেষে বাড়ির আঙিনায় পুলিশ সুপার দুইটি আম গাছের চারা রোপণ করেন।
জেলা পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। বাড়ির মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, টিউবওয়েল, পাকা ফ্লোরের বারান্দাসহ দোচালা দুইটি কক্ষ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাড়ির সাথেই একটি দোকান ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে যাতে করে এই নারী ভিক্ষা না করে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে।
সুবিধাভুগী ওই নারী মাহফুজা বেগম বাড়ি পেয়ে আবেগ আপ্লত হয়ে জানান, আমার এই খুশি প্রকাশ করার মতো নয়। সারা জীবন আমি এসপি স্যারের জন্য দোয়া করবো। দোয়া করি তার মতো প্রতি জেলায় এরকমের অফিসার জন্ম নেয়। তিনি জানান, তার স্বামী মৃত্যু হয়েছে ৪-৫ বছর আগে। এখন একমাত্র ছেলে পঙ্গু হয়ে আছে, কোন কাজ করতে পারে না। মানুষের কাছে ৫০-১০০ চেয়ে নিয়ে দুই বেলা আহারের ব্যবস্থা হতো। মাথা গোঁজার কোন ঠাই ছিল না আমার, পরের বাড়িতে থাকতাম। এসপি স্যার অনেককে ঘর বানিয়ে দিচ্ছে শুনে তার কাছে গিয়ে জানালে তিনি আমাকে ঘর নির্মাণ করে দেন। এরকম মানবিক স্যারের জন্য দু-হাত ভরে দোয়া করি।
পুলিশ সুপার আলীমুজ্জামান জানান, পুলিশ জনগণ নিয়ে কাজ করে, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাঁশাপাশি অনেক মানবিক কাজ করে থাকে, অতীতেও করেছে, যা হয়ত এখন আরো বেশী দৃশ্যমান। আমরা জনগণের খুব পাশে যেতে চাই। সেই ধারাবাহিকতায় জেলা পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে দরিদ্র অসহায় এই নারীকে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। আমরা মানুষের জন্য ব্যতিক্রম কিছু করে যেতে চাই।
Leave a Reply